বান্দরবানে ইক্ষু আর গুড় উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে চাষীরা

প্রকাশঃ ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ০৯:০৩:৩৭ | আপডেটঃ ১৯ মার্চ, ২০২৪ ০৭:৫৯:২৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অনেক জমিতে এখন চাষ হচ্ছে ইক্ষুর ,এক সময় যেসব জমিতে তামাক চাষ করে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তো এখন সেই জমিতেই ইক্ষু চাষ করে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় নেমেছে চাষীরা। শুধু ইক্ষু চাষ করেই কাজ শেষ নয় এখন ইক্ষু থেকে গুড় উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অনেক চাষী।

জেলার হানসামা পাড়া,বাঘমারা,জামছড়ি,বালাঘাটা,মুসলিমপাড়া,লেমুঝিড়ি,ভরাখালিসহ বিভিন্ন কৃষি জমিতে এখন এখন সিও-২০৮, রংবিলাস-৪২,বি এস আর আই,অমৃতসহ নানা জাতের ইক্ষু চাষ হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা সদর ছাড়া ও এখন রোয়াংছড়ি উপজেলা,লামা এবং আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে চলছে ইক্ষুর চাষ। একসময় পাহাড়ের বিস্তিন এলাকা জুড়ে তামাক চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলে এখন অনেক চাষীই ইক্ষু চাষ করে জীবন নির্বাহ করতে শুরু করেছে। ইক্ষু চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকায় কৃষকেরা এখন পাহাড়ের বিভিন্ন জমিতে ইক্ষু চাষ করছে আর ভালো ফলন হওয়ায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে অনেকেই ।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার হানসামা পাড়ার ইক্ষু চাষী লা মং বলেন, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বান্দরবানের সহযোগিতায় আমি ৩৩ শতক জমিতে ইক্ষুর চাষ করেছি এবং বিক্রি করে ভালো লাভবান হয়েছি।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার হানসামা পাড়ার আরেক চাষী মং এ নু মার্মা বলেন,আগে তামাক চাষ করতাম,বছর শেষে লাভ ও কম হতো ক্ষতি হতো বেশি । তিনি আরো বলেন, এখন পাহাড়ে  ইক্ষু চাষ করছি এবং ভালো উৎপাদন হচ্ছে।


বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে ইক্ষু একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কৃষকেরা জানায়, প্রতিবছর এই প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে ইক্ষু চাষীদের বিনামূল্যে বীজ,সার,কীটনাশক ও আপদনাশক প্রদান করা হয়, আর ইক্ষু চাষে রোগ বালাই কম হওয়া আর বিক্রি করে লাভ হচ্ছে ভালো,অন্যদিকে এখন ইক্ষু থেকে গুড় উৎপাদন করে প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিয়ে চাষীরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছে।

সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানায়, প্রতিবছর এই প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে ইক্ষু চাষীদের বিনামূল্যে বীজ,সার,কীটনাশক ও আপদনাশক প্রদান করা হয়, আর ইক্ষু চাষে রোগ বালাই কম হওয়া আর বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় বেশিরভাগ কৃষক এখন তামাক ক্ষতিকর তামাক চাষ ছেড়ে ইক্ষু চাষ করছে।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ,বান্দরবান সাব-স্টেশানের বৈজ্ঞানিক সহকারি মং থোয়াইচে মার্মা বলেন,আমরা সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান সাব স্টেশানের মাধ্যমে ইক্ষু চাষীদের বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করে আসছি এবং বান্দরবানের পরিবেশ ও প্রকৃতি ইক্ষু চাষের জন্য বেশ উপযোগি এবং বান্দরবানে আগামীতে ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণ হবে বলে আমাদের আশাবাদ।


বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ,বান্দরবান সাব-স্টেশানের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইনচার্জ কৃষিবিদ ক্যছেন জানান, সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ।

২০১৮-১৯ রৌপন মৌসুমে বান্দরবানে ৫৭০ হেক্টর জমিতে ইক্ষু আবাদের বিপরীতে ৮৩ হাজার ৬শত ২২ মেট্রিক টনে ইক্ষু উৎপাদন হয় আর ২০১৯-২০ রৌপন মৌসুমে জমির পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩০ হেক্টরে চাষাবাদ হয় আর তা থেকে ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ইক্ষু উৎপাদন হওয়ার আশা রয়েছে । কৃষিবিদ ক্যছেন আরো জানান,বর্তমানে প্রায় ৪শত জন চাষী বান্দরবানে ইক্ষু চাষ করছে এবং অনেক চাষীকে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ,বান্দরবান সাব-স্টেশানের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে । তিনি আরো জানান ,বান্দরবানে গুড়ের চাহিদা প্রায় ৩৩ মেট্রিক টন কিন্তু এখানে গুড় উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮/৯ মেট্রিক টন আর এই ঘাটতি পূরণের একটি সুর্বণ সুযোগ আখ চাষের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন করা।



ইক্ষু চাষীদের প্রত্যাশা,পার্বত্য এলাকায় কৃষকদের ইক্ষু চাষের ব্যাপক প্রশিক্ষন,উন্নত বীজ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,বাজারজাতকরনের ব্যবস্থা ও কৃষি ঋন গ্রহনে সহজলভ্যতা সৃষ্টি করতে পারলে এই এলাকায় আরো ব্যাপক আকারে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারিত হবে।