দুর পাহাড়ে মৌ চাষেই সুখের সংসার শরবিন্দু চাকমার

প্রকাশঃ ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১১:৩৫:১৪ | আপডেটঃ ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০১:১৮:৩৩
হিমেল চাকমা,বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি। মৌমাছি চাষ করে জীবন বদলীয়েছে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের আবাসিক এলাকার শরবিন্দু চাকমা (৫০)। এক সময় কৃষি কাজই ছিল তাঁর প্রধান পেশা। বর্তমানে তার পেশা মৌ চাষী। বর্তমানে তাঁর মৌ চাক আছে পাঁচটি। এ পাঁচটি মৌ চাক থেকে তার বাৎসরিক আয় সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, আমি এখন আর কঠোর পরিশ্রম করে কৃষি চাষ করি না। এখন মৌ চাষই আমার প্রধান পেশা। এ আয় দিয়ে আমার পরিবার চলে, কৃষি কাজ চলে। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে সুন্দর বাড়ি শরবিন্দুর। স্ত্রী আর একপুত্র সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার।

কথা বলে জানা যায়,তাঁর মৌ চাষের যাত্রা শুরু আরো ১০ বছর আগে থেকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প থেকে কয়েকদিনের প্রশিক্ষণে আয়ত্ব করেন মৌমাছি লালন পালনের কৌশল। এরপর নিজে নেমে পড়েন মৌ চাষে। প্রথম দিকে সফলতার মুখ না আসলেও পরে নিজেকে আবিস্কার করেন একজন দক্ষ মৌচাষী হিসেবে। এলাকায় তিনি এখন সফল মৌ চাষী হিসেবে পরিচিত।

শরবিন্দুর স্ত্রী সুমনিতা চাকমা বলেন মৌ চাকগুলো এখন আমাদের আয়ের উৎস হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গাথেকে মধু কিনতে আমাদের এখানে আসে। যে পরিমান চাহিদা সে পরিমান মধু দিতে পারি না। অনেকে অগ্রীম চাহিদা দিয়ে রাখে।

শরবিন্দু বলেন, কার্তিক থেকে মৌচাকে মধু পাওয়া যায়। জৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করেন তিনি। প্রতিটি মৌ চাক থেকে তিনি মধু সংগ্রহ করেন ১০ থেকে ১২ কেজি। প্রতি কেজি  মধু ঘরেই বিক্রি করেন ১৫শ টাকা। চাহিদা কিন্তু অনেক। পাঁচটি মৌ চাক থেকে সর্বনিম্ন আয় হয় এক লাখ টাকা। এছাড়া কয়েক মাস পর পর মৌচাকে রাণী মৌমাছি জন্ম হয়। এগুলো আলাদা করে বিক্রি করে আয় করেন প্রতিটি চার হাজার টাকা। বছরে একটি মৌ চাক থেকে ৩ থেকে ৪ টি রাণী মৌমাছি পাওয়া যায়।

শীত মৌসুমে বাড়ির আশে পাশের জমিতে সরিষা ক্ষেত করেন শরবিন্দু। যখন ক্ষেতে সরিষা ফুল ফোটে তখন মৌমাছিরা ঝাকে ঝাকে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় মৌমাছিগুলো। এ দৃশ্য আনন্দ দেয় শরবিন্দুকে। আর কিছুদিন পর মৌচাকে মিলে চকচকে সোনালী মধু।

পুরো পার্বত্য এলাকায় মৌ চাষ করা সম্ভব মনে শরবিন্দু। তিনি বলেন, পাহাড়ে যে কেউ এ চাষ করতে পারে। সারা বছর পাহাড়ে বুনোফুল থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে। শীতের বিভিন্ন সবজি ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করে। পরাগায়নের কারণে সবজিরও ভাল ফলন হয়। আমন ধান উঠে যাওয়ার পর পাহাড়ে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এসব এলাকায় খুব কম খরচে সরিষা চাষ করা গেলে শুধু সরিষা বিক্রি করে অর্থ পাওয়া যায়। সরিষার ফুল দিয়ে মৌ চাষও হয়। আর এ মধুও বছরের সবচেয়ে ভাল মধু হয়।




রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, পাহাড়ে সাধারণত আমন ধান উঠে যাওয়ার পর এসব জমিগুলো খালি পড়ে থাকে। এসব জমিতে ৭৫/৯০ দিন বয়সী সরিষা চাষে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের মাঝে বীজ ও কৃষি উপকরণ দিচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগ। এর উদ্দেশ্য, কৃষকদের লাভবান করা। এ দিয়ে যদি মৌমাছি চাষ করে যদি আয় আসে তাহলে কৃষকরা আরো বেশী লাভবান হবে এবং সেটি করে অনেকে লাভবান হচ্ছে। এ বছর রাঙামাটিতে ১২৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যামাত্র প্রায় ১৮৬ মে.টন।