অগঠনতান্ত্রিকভাবে যুবলীগ নেতাকে বহিস্কারের অভিযোগ, পদ ফিরিয়ে না দিলে গণ পদত্যাগের হুশিয়ারী

প্রকাশঃ ২২ জানুয়ারী, ২০২০ ০৩:৪৩:৪১ | আপডেটঃ ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:০২:৪৬
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। রাঙামাটি শহরের ৮নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিনকে অন্যায় এবং অগঠনতান্ত্রিকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন।

তিনি জানান, রাঙামাটি শহরের বনবিভাগের সড়কের  সামনে ফুটপাতে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট থেকে যুবলীগ নেতার ভাই ও তার ব্যবসায়ী পার্টনার  এক ছাত্রলীগ নেতা মাস শেষে চাঁদা তুলে।  সেখানে  তারও একটি দোকান আছে চাঁদা না দেয়ায় রাজনৈতিক গ্রুপির এর কারনে তাকে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তার পদ ফিরিয়ে না দিলে গণ পদত্যাগের হুশিয়ারী দেন নাসিরসহ তার সহকর্মীরা।

বুধবার সকালে রাঙামাটি রিপোটার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নাসির উদ্দিন এই দাবি জানান।

নাসির আরো জানান,  তাকে বহিস্কারে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মানা হয়নি।  গায়ের জোরে এক তরফাভাবে বহিস্কারের করেন পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব খান শিবলু।

নাসির বলেন, তিনি কোনভাবে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নয়। তার রাজনৈতিক জীবনে কলঙ্কিত করতে এবং পরিবারকে হেয় করতে আব্দুল ওয়াহাব এককভাবে এ কাজটি করেছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে তার পদ ফিরিয়ে না দিলে তার ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতৃবৃন্দ সংগঠন থেকে গণহারে পদত্যাগ করবে বলে হুশিয়ারী দেন।

লিখিত সংবাদ সম্মেলনে নাসির আরো বলেন, যুবলীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ধারা ২২এর ক নম্বর এ দলীয় শৃঙ্খলায় বলা আছে যে, যুবলীগের কোন স্তরের নেতা-কর্মী/কর্মকর্তা যদি সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি, নৈতিকতা বিরোধী, সমাজ বিরোধী, আর্থিক অনিয়ম বা কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হন তবে তার বিরুদ্ধে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে। অপরাধ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে শাখার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক কারণ দর্শানোর নোটিস বা পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান বা সদস্য পদ সাময়িক স্থগিত করে অভিযোগের বিবরণী ও অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাবে। সংগঠন থেকে বহিস্কারের এখতিয়ার প্রেসিডিয়ামের সুপারিশ মোতাবেক সংগঠনের চেয়ারম্যান সংরক্ষণ করেন। উল্লেখ থাকে যে, জেলা কমিটি কোন নেতা কর্মীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও দলিল প্রমানাদি ছাড়া স্থায়ী বহিস্কার করতে পারে না’। এছাড়াও বহিস্কারাদেশ বিষয়ে পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব খান কোন ধরণের সাংগঠনিক সভা না করে ও রেজুলেশ না করে এবং সভাপতি আবুল খায়ের রাফি‘র স্বাক্ষর ব্যাতীত একক সিদ্ধান্তে বহিস্কার করে। বহিস্কার আদেশের ৭দিন পরে পৌর যুবলীগের প্রায় নেতৃবৃন্দের কাছে টেলিফোনে হুমকি দিয়ে অনেকটা জোর করে স্বাক্ষর নেয়।   



অথচ গঠনতন্ত্রের এসব ধারার কোনটিই মানা হয়নি আমার কথিত স্থায়ী বহিস্কার আদেশ দেয়ার বিষয়ে। এমনকি আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কারণ দর্শানোর কোন নোটিশও আমাকে দেয়া হয়নি। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে পদ সাময়িক স্থগিত করার যে সাংগঠনিক নিয়ম আছে তাও মানা হয়নি। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গায়ের জোরে আমাকে অন্যায়ভাবে ‘স্থায়ী বহিস্কার’ আদেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথিত বহিস্কারের খবর ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে যেমনি পরিবার, সংগঠন, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তেমনি ‘আওয়ামী যুবলীগ’র নাম জড়িয়ে ঢালাওভাবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হওয়ায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মান ও সংগঠনকেও বিতর্কিত করা হয়েছে। এতে আমার অপূরণীয় মানহানী হয়েছে। ২০০১ থেকে দীর্ঘ ১৯ বছরের আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকীর মুখে পড়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৮ নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগ সভাপতি আবছার,  ৮ নং ওয়ার্ড যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আতাউর রহমান, ত্রাণ সম্পাদক রতন গোমেজ, ৮ নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি মাহাবুব।

এ বিষয় রাঙামাটি পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব খান শিবল বলেন, পৌর যুবলীগের কাছে  নাসিরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দেয় ব্যবসায়ীরা,  অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে আপনার স্থায়ী বহিস্কার করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা সভাপতির অনুমতিক্রমে বহিস্কার করা হয়েছে।




আপনাদের বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ আছে আরেকটি প্রশ্নের জবাবে পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব খান শিবল বলেন, এটি আমি বৈধভাবে দরখাস্ত করে নিয়েছি।  

বিষয়টি নিয়ে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল জানান, আমি শুনেছি একটি চাঁদাবাজির অভিযোগের কারনে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে, কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুসারে কেন তাকে নোটিশ দেয়া হয়নি বা তার পদ সাময়িক স্থগিত না করে কেন বহিস্কার করা হয়েছে সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। তিনি আরো বলেন, বহিস্কারের বিষয়টি আমরা পত্রিকা বা সামাজিক মাধ্যমে দেখলেও আমার কাছে কোন নোটিশ আসেনি। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব, যদি ঘটনা সত্য তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বহাল থাকবে আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে পৌর কমিটি এজন্য জবাবদিহি করতে হবে।