লামার সফল নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা পারুলের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা

প্রকাশঃ ০৮ জানুয়ারী, ২০২০ ০৯:৪০:৫০ | আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:০৭:০১
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের লামা উপজেলার বাসিন্দা মুক্তা বেগম, রুনা আক্তার, নুর জাহান আক্তার, ফাতেমা আক্তার, জাহেদা বেগম এবং কলেজ ছাত্রী কোহিনুর আক্তারসহ আরো কয়েকশত নারী এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের এই স্বপ্ন যাত্রার পথ পরিক্রমায় সামনে রয়েছে এক সফল নারীর গল্প। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও বান্দরবানের লামা উপজেলার নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল।

লামা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সবুজ বেষ্টিত ছোট্ট টিলায় দ্বিতল একটি পাকা ভবনে লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির অফিস তৈরি করে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন নারীদের প্রশিক্ষিত করতে। এখানে প্রতিদিনই স্বপ্ন বুনন করে একঝাক নারী। গৃহকোণে আবদ্ধ থেকে নানান বঞ্চনার শিকার হতে চায়না তারা। এদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেন, সমাজকেও স্বপ্ন দেখান। তাদের শ্রম আর নিখুঁত শিল্প বিন্যাসে তৈরি হয় নানান ধরণের সৌখিন ও নিত্য পন্য।

নব জাগরণ সমিতির সদস্য ও শিক্ষার্থীদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে নকশীকাঁথা, বুটিক শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, পুতির তৈরি শো-পিস পুতুল, ফুলের টব, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। হাতে তৈরি এসব পণ্যের টেকসই ও গুণগত মানও ভালো। উৎপাদিত এসব পণ্য বিপণনে পরিকল্পিত একটি সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল। তিনি বলেন, মেয়েদের নিখুঁত আন্তরিকতায় সৃষ্ট এসব সৌখিন-নিত্যপণ্য বাজারজাত নিশ্চয়তা রয়েছে।
 
২০১৭ সালে জেলার শ্রেষ্ট জয়ীতা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কণ্যা সংগমী এই নারী বলেন, বান্দরবান জেলার মেঘলায় নর্বনির্মিত জয়ীতা ভবনের স্টলে এসব পণ্য বিক্রি হবে, এছাড়া এসব পণ্য বিপণনে লামা পৌর শহরে শো রুম নেয়ার আশাবাদ রয়েছে। ফাতেমা পারুল আরো বলেন,সরকারি ও বেসরকারী সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকলে লামার নারীরা আর ঘরে বসে থাকবে না ,তারা নিজের পায়ে দাড়াঁতে পারবে।

লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল বলেন,স্বল্প শিক্ষিত নারীরা সংসার জীবনে স্বামীর আয়ের উপর নির্ভর করে বসে থাকে। কিছু নারী স্বামীদের উপার্জন নির্ভর থাকায় সংসার জীবনে বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিক্ষার হয় ,তাই প্রতিটি নারীকে কর্মমুখী করে তুলতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আমি লামা উপজেলায় এই নব জাগরণ মহিলা উন্নœয়ন সমিতি সৃষ্টির মাধ্যমে এই পর্যন্ত কয়েকশত নারীকে স্বাবলম্বী করে তুলেছি।

লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল আরো বলেন,আমাদের এই সমিতিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী আজ স্বাবলম্বী এবং তারা ব্যক্তি জীবনে স্বচ্ছল।

সাম্প্রতিককালে নারীদের তৈরি এসব শোপিস পণ্য ক্রয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এসব পন্য ক্রয়ে সৌখিন ক্রেতাদের আগ্রহের ফলে লামা নব জাগরণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল শুরু করেছে জোর প্রচেষ্ঠা। সরকারের নারী বান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তব প্রয়োগের ফলে স্বনির্ভর হতে নারীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল। তার প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো।



কথা হয় লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির সদস্য নুর জাহান আক্তারে সাথে তিনি জানান, লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল এই কর্মযজ্ঞে এক অনুপ্রেরণা। উনার উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কারিগরি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা-দায়িত্ববোধ জাগ্রত হচ্ছে নারীদের।

সমিতির সদস্য জাহেদা বেগম বলেন, গ্রামে বাল্য বিবাহ, যৌতুক রোধ, পারিবারিক কলহ বন্ধ-সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়ও কাজ করছেন এই গর্বিত নারী লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুল। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, শোপিস স্টল প্রদর্শন, র‌্যালি, সভা-সমাবেশে তিনি কাজ করেন অক্লান্তভাবে। আর তারই অনুপ্রেরনায় দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিপন্ন মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে লামা নব জাগরণ সমিতির সদস্যরা।




এদিকে ৮ জানুয়ারী বধুবার বিকেলে লামা নব জাগরণ মহিলা উন্নয়ন সমিতির কার্যালয়ে সম্প্রতি প্রশিক্ষণ নেয়া প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে প্রদান করা হয় ভাতা। প্রশিক্ষণের দুই মাসের ভাতা তুলে দেন বান্দরবান কুটির শিল্পের হিসাব রক্ষক মোঃঅজিউল্যাহ। এসময় সমন্বয় কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের ভূইয়া, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও লামার নব জাগরণ মহিলা উন্নœয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা পারুলসহ সমিতির বিভিন্ন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় সেলাই কাজ ও পুতির কাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩৬ জনকে দুই মাসের প্রশিক্ষণ বাবদ জনপ্রতি   ২ হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হয় এবং জানুয়ারী থেকে ফেব্রয়ারী পর্যন্ত প্রশিক্ষণের জন্য নতুন নারী সদস্য নির্বাচন করা হয়।

বিগত সময়ে এই সফল নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা পারুলের হাত ধরে লামা উপজেলার ৬শত নারী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়েছে এবং তারা স্বাবলম্বী হয়ে সংসার জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে।