খাগড়াছড়িতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে সাজাভোগ !

প্রকাশঃ ০৬ জানুয়ারী, ২০২০ ১১:৫০:৪৮ | আপডেটঃ ০৪ মে, ২০২৪ ০৩:৩৩:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত আসামী কারাগারের পরিবর্তে থাকছে নিজ বাড়িতে। আইন কিংবা কাউকে প্রভাবিত করে নয়, নিয়মের মধ্যে ঘটেছে ব্যতিক্রম এ ঘটনা। দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস এ্যাক্ট ১৯৬০ এর ৪ (১) ধারা মোতাবেক ১১ শর্ত মেনে প্রবেশন কর্মকর্তার প্রি-সেন্টেস রিপোর্টের ভিত্তিতে আসামী মো. আব্দুর সামাদকে কারাগারের পরিবর্তে ৬ মাস নিজ বাড়িতে সাজা ভোগের সুযোগ দিয়েছে খাগড়াছড়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক মো. সামিউল আলম।

আদালতের তথ্যমতে, এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও চলতি বছরের ২ জানুয়ারী জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার প্রি-সেন্টেস রিপোর্ট মূলে আদালত অভিযুক্ত আসামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে নিজ বসতবাড়িতে সাজা ভোগের সুযোগ দিল। ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার লাম্বাছড়া গ্রামে পুকুর থেকে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মো. আব্দুর সামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতিবেশী মো. আব্দুর রহমান মিয়া। মামলার সাক্ষী ও অপরাধ বিবেচনা করে বিচারক দোষী সাব্যস্ত হওয়া মো. আব্দুর সামাদকে দন্ডবিধি ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস এ্যাক্ট ১৯৬০ এর ৪ এর ১ ধারায় ১১ শর্তে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার প্রি-সেন্টেস রিপোর্ট মূলে ৬ মাস নিজ বাড়িতে সাজা ভোগের সুযোগ দিয়েছেন খাগড়াছড়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী লঘু অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের আর্থসামাজিক, পারিবারিক ও ফৌজদারি মামলায় এর আগে দন্ডিত না হওয়া ব্যক্তিকে কারাগারে পরিবর্তে নিজ বাড়িতে রেখে সাজা দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেয়ার নির্দেশনা দেন।

ব্যতিক্রমী এমন রায়ে আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা অক্ষুন্ন থাকার পাশাপাশি কারাগারের বাইরেও সাজা ভোগ করে বড়ধরণের অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম জানান, দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ এর ৪ ধারায় বলা আছে যারা এর আগে কখনো দন্ডিত হয়নি কিংবা দুই বছরের বেশি মেয়াদে কখনো দন্ড পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে প্রবেশন ধারাটি প্রযোজ্য হতে পারে।

আসামির বয়স, চরিত্র, পূর্ব ইতিহাস কিংবা শারীরিক অথবা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরণ বা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার  প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিচারক এই ধারা প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সাজার মেয়াদে কারাগারে না থেকে মুক্তভাবেই বিচরণ করতে পারবেন আসামি। তবে এই মেয়াদের মধ্যে তিনি আর কোনো অপরাধ করতে পারবেন না এবং তাকে সদাচরণ করতে হবে। এছাড়াও বিচারক তাকে এই মেয়াদের জন্য বিভিন্ন শর্ত আরোপ করতে পারেন। শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে ফের কারাদন্ড ভোগ করতে হতে পারে বলে ১১ টি শর্তে উল্লেখ রয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে আসামীর আর্থসামাজিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন বলেন, ব্যতিক্রমী এ রায়ে খাগড়াছড়ির আদালত প্রাঙ্গণে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিচারক মহানুভবতার যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে করে একজন অপরাধী কারাগার নামক কষ্টের বাসস্থান থেকে মুক্ত থেকে বড় ধরণের অপরাধ থেকে বিরত থাকার সুযোগ পেয়েছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা কৃতি বিজয় চাকমা বলেন, আদালতের নির্দেশে ভিকটিম মো. আব্দুর সামাদের আর্থসামাজিক ও পারিপাশির্^ক অবস্থা বিবেচনা করে গত ২ জানুয়ারী প্রি-সেন্টেস রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা মেনে ভিকটিমকে মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সাজা শেষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারী খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার লম্বাছড়া গ্রামে পুকুরের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনায় মো. আব্দুর সামাদের বিরুদ্ধে মাটিরাঙ্গা থানায় মামলা করেন প্রতিবেশী মো. আব্দুর রহমান মিয়া। আদালত মামলার সাক্ষী ও অপরাধের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আসামী আব্দুর সামাদকে দন্ডবিধি ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৬ মাসের দন্ডে দন্ডিত করে সাজা স্থগিত করে।

পরবর্তীতে জেলা প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে প্রি-সেন্টেস রিপোর্ট গ্রহণ করে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স এ্যাক্ট ১৯৬০ এর ৪ ধারায় আসামীকে কারাগারের পরিবর্তে নিজ বাড়িতে ১১ শর্ত মেনে সাজা ভোগের সুযোগ প্রদান করেন।