রাঙামাটির দৃষ্টিনন্দন স্থান এখন পলওয়ে পার্ক

প্রকাশঃ ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:২৭:৫৪ | আপডেটঃ ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ০৭:২৮:০৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পলওয়ে পার্ক। রাঙামাটির দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম। সব বয়সের মানুষের পছন্দের স্থান হিসেবে মন কেড়েছে পার্কটি। রাঙামাটি শহরে কোথাও বেড়ানো কথা বললে প্রথমে এ নামটি চলে আসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রূপ বদলায় পার্কটি। প্রকৃতি আর শিল্পীর হাতের ছোয়া দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কটি।

শুরুটা হয় ঠিক এভাবে, ভোরে পাখির ডাক। ভোর পেরুতে সুর্যোদয়। এরপর, কাপ্তাই হ্রদের দুর থেকে কানে আসে ইঞ্জিন চালিত নৌকার শব্দ। বাড়তে থাকে পর্যটকের পদচারণা। দুপরে যখন মানুষ কমে ঠিক তখনই পলওয়ের উপরের মেঘগুলি সরে যায়। দেখা মিলে নীল আকাশের। তখন পাখিরা পার্কে এসে গান করে।

এবার পড়ন্ত বেলা, হ্রদের দক্ষিনা হিম শীতল বাতাস এসে স্পর্শ করে গায়ে। ঠান্ডা হয়ে যায় শরীর। সতেজ হয় মন। এ যেন শান্তি ভুস্বর্গ।

সূর্য ডুবে যাবার সাথে সাথে যখন মানুষের ভিড় বাড়ে তখন পার্কের মাঝখানে বসে পুসকার মেলা বসে। কেউ হাতে, কেউবা টেবিলে পুসকার প্লেট রেখে, কেউ বসে কেউবা দাঁড়িয়ে প্রকৃতি দেখে। এ সময় অনেকে শিশুকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে।

কেউবা চলে যান লাভ পয়েন্ট।  লাভ পয়েন্টের কথা বললে এর নাম করণের কথা বলতে হয়।

২০১৪ সালে ১৯ মার্চ সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আইরিন সুলতানা লিমাকে নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন আমেরিবার প্রবাসী আলাউদ্দিন পাটোয়ারী। সেদিন কাপ্তাই হ্রদে হঠাৎ ঘুর্নিঝড়ে তাঁদের নৌকাটি ডিসি বাংলোর দক্ষিণে দিকে কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে উল্টে গেলে পানিতে তলিয়ে যান আলাউদ্দিন ও লিমা।


তিনদিন পর একে অপরকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় পলওয়ের পাশে তাদের মরদেহ ভেসে উঠে। মৃত্যু তাদের ভালবাসাকে ছিন্ন করতে পারেনি। তাদের ভালবাসার  অমরত্ব দিতে এ লাভ পয়েন্টের নাম করণ। পার্কে প্রবেশ করলে যে কেউ একবার লাভ পয়েন্ট দেখতে যায়। এ পয়েন্টে কেউ এসে তালা ঝুলায় আবার কেউ যুগল  ছবি তুলেন।

এ পার্কের যাত্রা বেশি দিন নয়। গত বছর লাভ পয়েন্ট উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। এবছরের ২৬ ফেব্রুয়ারী পলওয়ে পাকের্র উদ্বোধন করেন পুলিশের মহা পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।


পার্কটির অবকাঠামোসহ  উন্নয়ন কাজ করেছে পুলিশ বিভাগ,  পার্কটির পরিচালনা করে রাঙামাটি জেলা পুলিশ। পার্কের সৌন্দর্যের পাশাপাশি পার্কের সকল কর্মচারী আচরণেও মুগ্ধ হন পর্যটকরা। সুশৃঙ্খল গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। যেন নিরাপদ ভ্রমণের স্থান। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে কটেজ। যে কেউ চাইলে নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে এ কটেজে থাকতে পারেন।

পার্কটি সাজানোর ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা পালন করেছেন পুলিশ সুপার আলমগীর কবির। দাপ্তরিক কাজ করার পাশাপাশি বিকাল বেলায় এবং সরকারি ছুটির দিন সুযোগ পেলে পাকর্টি উন্নয়নের পরিকল্পনায় নেমে পড়েন পুলিশ সুপার ও তার সহকমীর্রা। এতে ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায় একটি নান্দনিক পার্কে।

পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন,জায়গাটি পড়ে ছিল। এমনটি কাপ্তাই হ্রদের জোয়ারে পাড় ভেঙ্গে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল। এটি সুরক্ষা করতে গিয়ে এ পার্ক গড়ার পরিকল্পনা আসে। রাঙামাটি যদিও পর্যটনের শহর কিন্তু শহরের ভিতরে ঝুৃলন্ত সেতু ছাড়া দেখার জন্য কমই জায়গা আছে। এ শূণ্যতা পুরণ করেছে পলওয়ে পার্কটি।



আলমগীর কবির পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের আগে পলওয়ে পার্ক ছিল অনেকটা পরিত্যক্ত, তার যোগদানের পর পাল্টে যায় এই চিত্র, বর্তমানে পর্যটন কমপ্লেক্সের চেয়েও বেশী পর্যটক আসে পলওয়ে পার্কে।