বছর শেষে রাঙামাটির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, পুলিশ বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক

প্রকাশঃ ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০৬:২৮:৩২ | আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৪২:৪৭

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বছরের শুরুতে রাঙামাটি জেলার আইন শৃঙ্খলা ভালো থাকলেও মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে এসে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যে বিস্তার ও দুবুর্ত্তদের হামলায় রাঙামাটিতে গেল বছর কমপক্ষে ১৫জন মারা যায়। 


বছরের শুরুতে জেলার আইন শৃঙ্খলা ভালো থাকলেও মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে এসে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্যে বিস্তার ও দুবুর্ত্তদের হামলায় রাঙামাটিতে গেল বছর কমপক্ষে ১৫জন মারা যায়। এরমধ্যে আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে ১০ এপ্রিল রাঙামাটির নানিয়ারচরে মোটর বাইক চালক সাদেকুল ইসলামকে হত্যা, নানিয়াচরে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নেতা রমেল চাকমাকে ৫এপ্রিল গাড়ী ভাংচুর ও আগুন দেয়ার মামলায় গ্রেফতারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ এপ্রিল মারা যায়। ২জুন রাঙামাটির লংগদুতে মোটর বাইক চালক ও যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নকে হত্যা, হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ৩জুন বাঙালীদের সমাবেশ, সমাবেশের পর দুবৃর্ত্তরা পাহাড়ীদের তিলটিলা, মানিকজোড়, ও বাইট্টাপাড়া গ্রামে আগুন দেয় এতে প্রায় ২শতাধিক পাহাড়ীদের ঘর আগুনে পুড়ে যায়। এসব ঘটনায় পাহাড়ী বাঙালীরা পরস্পরকে দোষারোপ হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসুচী পালন। বছরের শেষে এসে ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে নানিয়ারচরে ইউপিডিএফ সমর্থিত সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে নবগঠিত গনতান্ত্রিক ইউপিডিএফ, ৭ ডিসেম্বর জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরুবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা, একইদিন বিলাইছড়ি আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রাসেল মার্মাকে কুপিয়ে আহত করে দুবৃর্ত্তরা, ৭ডিসেম্বর ভোর রাতে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ঝর্ণা খীসাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুবৃর্ত্তরা। ১৭ ডিসেম্বর আবারো আধিপত্যে বিস্তারের লড়াইয়ে নব গঠিত ইউপিডিএফের গুলিতে ইউপিডিএফের সংগঠক অনল বিকাশ চাকমা প্লটো নিহত হন। আওয়ামীলীগ নেতা ও আহত হওয়ার ঘটনায় আঞ্চলিক দল জেএসএসকে দায়ী করেছে আওয়ামীলীগ। ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটি জেলায় হরতাল পালন করে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে জেএসএস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 



এদিকে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের হত্যা ও কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় পুলিশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো থানায় মামলায় করলে বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার পুত্রসহ পুলিশ কমপক্ষে ৪০জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই জনসংহতি সমিতির নেতা কর্মী। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন সময় ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক কারন দেখিয়ে জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, সদর উপজেলা এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রায় ৪শতাধিক পাহাড়ী আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছে। এঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতিকে দায়ি করে আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন অস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিষয়গুলো নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেছেন, ১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তির পর জেএসএস চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে গনতান্ত্রিক আন্দোলন করছে, এধরনের ঘটনাগুলো দু:খজনক, আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সজীব চাকমা বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের পদত্যাগের বিষয়টি তাদের দলীয় আভ্যন্তরীন বিষয়, এখানে আমাদের বলার কিছু নেই তবে শুনেছি ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক কারনে তারা পদত্যাগ করছে।


রাঙামাটিতে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের হত্যা ও হামলার ঘটনায় জেএসএস দায়ী করে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেছেন, অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজির কারনে পাহাড়ের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। পাহাড়ীরা যেন আওয়ামীলীগ করতে না পারে সে জন্য অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ী আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের পদত্যাগে বাধ্য করছে জেএসএস। আমরা সরকারকে বার বার বলে আসছি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলে পাহাড়ে শান্তি আসবে।

বছর শেষে এসে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটলেও পুলিশের দাবি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানের দাবি যে ঘটনাগুলো সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি অভিযান চালাচ্ছে।