সাধারণ সম্পাদক পদে চলছে নবীন প্রবীণ সমীকরণ

প্রকাশঃ ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:৫৪:২৫ | আপডেটঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০৫:২৮:২৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলর আগামী ২৪ নভেম্বর। শেষ মুর্হুতের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় কাটছে সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে সম্মেলনে।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের পরবর্তী কার্যকরি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হচ্ছেন যেটি নির্ধারণ হবে সম্মেলনের দিন। তাই সম্মেলনকে ঘিরে বাড়তি আগ্রহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগীতা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপির নাম রয়েছে এগিয়ে। এছাড়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সমীর দত্ত চাকমা ও সদস্য রইছ উদ্দিনকে সভাপতি পদে দেখতে চায় এমন প্রচারণা চলছে। এছাড়া বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাহাব উদ্দিন মিয়া, দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. কাশেম সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে রয়েছে। 

খাগড়াছড়ি জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তৎকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা সভাপতি এবং জাহেদুল আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তারপরের বছর ২০১৩ সালের নভেম্বরে খাগড়াছড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। তৎকালীন সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা চিকিৎসার জন্য ভারতে ও সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম হজ পালনে সৌদি আরবে ছিলেন। আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের বাধার মুখে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন।

এছাড়া ২০১৭ সালে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ  সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য করা হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত রেখে সাংগঠনিক নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন কুজেন্দ্র লার ত্রিপুরা। এরপর দলীয় কোন পদ পদবীতে না থেকেও নেপথ্যে দলকে সুসংগঠিত রাখতে কাজ করেছেন। যার জন্য তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে সংসদ সদস্য। আগামীতে তার বিকল্প কিছু আপাতত চিন্তা করছে না জেলা ও তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন।

সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে খাগড়াছড়ি আওয়ামীলীগ পরিবারে। পৌর নির্বাচন নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অবহতি পাওয়া জাহেদুল আলমের ছোট ভাই জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম আসন্ন কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। সাংগঠনিক দক্ষতায় দিদারুল আলমের ক্লিন ইমেজ সম্মেলনে কতটা কাজে দিবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর চেয়ে বয়সে প্রবীণ রাজনৈতিকরা একই পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করায়। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের বিগত ৪ বছরের কর্মকান্ড সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন জেলা আওয়ামীলীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে এই দুইজনকে চাপিয়ে সম্মেলনকে ঘিরে আলোচনা এসেছে দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাশেম। দীর্ঘ সময়ের রাজনীতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক ইমেজের কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে তার সম্ভাব্যতার পাল্লা ভারী দেখছেন অনেকেই।

দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. কাশেম এ বিষয়ে  বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে মুজিবীয় আদর্শে রাজনীতি করছি। আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে তিনি অতীতে অনেক ত্যাগ ও নির্যাতন শিকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলনীতিতে বিশ্বাস করি। আগামীতে যদি দলের প্রয়োজনে আমাকে যেকোন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে আমি সেটি পালনের চেষ্টা করব।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, আওয়ামীলীগের জেলা সভাপতি হিসেবে নয় তিনি সবসময় নিজেকে একজন কর্মী হিসেবে চিন্তা করেন। কর্মীবান্ধব ও সাংগঠনিক দক্ষতায় যে কাজ করবেন তিনি তার নেতৃত্বে রাজনীতি করতে প্রস্তুত বলে জানান।

সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চাইথোঅং মারমা বলেন, উৎসবমুখর ও সকলের অংশগ্রহণে সম্মেলন সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি চলছে। খাগড়াছড়িতে কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আগামীর দিনের নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে।