প্রকাশঃ ২১ মে, ২০১৮ ১২:০৮:৫২
| আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০১:০৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে চলমান দুই আঞ্চলিক দলের দ্ধন্ধ-সংঘাতে পানছড়ি বাজারে ক্রেতাদের অনুপস্থিতি এখন শূন্যের কোটায়। আজ রোববার সাপ্তাহিক হাটবারেও ছিলো বাজারটি ক্রেতাশূন্য। ফলে কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়ার আশংকা ব্যক্ত করছেন, বাজার ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক ধরে সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতি’র বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ‘শুকতারা’ নামের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। মূলতঃ নিরাপত্তাহীনতার কারণেই তাঁরা ওই হোটেলে আশ্রয় নেয়। এদিকে রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে রহস্যজনক কারণে কোন যানবাহনও চলাচল করেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো বাজারের সব দোকানপাট খোলা থাকলেও বাজার ছিল পাহাড়ি ক্রেতা-বিক্রেতা শূণ্য। উৎপাদিত কাঁচা তরিতরকারী বাজারে আনতে না পারায় তাও পঁচে যাচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষ।
ঐতিহ্যবাহী পানছড়ি বাজারে প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছে। প্রতি রোববার পানছড়ি বাজারের হাটবার। ওইদিন এ বাজারে হাজারো পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়। কয়েকজন বাঙালি বিক্রেতা মালামাল নিয়ে বসে থাকলেও কোন ক্রেতা নেই।
পানছড়ির টমটম চালক মনিরুল ইসলাম জানান, ইউপিডিএফ বাজার বর্জনের পাশাপাশি গাড়ী চলাচলেও বাধা দিচ্ছে। কেউ রাস্তায় গাড়ী নামলে ভাংচুর করা হচ্ছে।
কাঠ ব্যবসায়ী রনি ত্রিপুরা জানান, আমরা সাধারণ পাহাড়ি জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি না করলে সংসার চলে না। কিন্তু ইউপিডিএফ’র বাজার বর্জনের কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন না খেয়ে মারা যাবে।
পানছড়ির নার্সারী ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, ইউপিডিএফ-কে চাঁদা না দিয়ে কোন ব্যবসা করা যায় না। এটা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। রাস্তায় চারা নিয়ে নামলে চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়।
পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হেদায়েত তালুকদার বলেন, কয়েকদিন ধরেই ইউপিডিএফ বাজার বর্জনের হুমকি দিয়ে আসছে। রোববার থেকে তা কার্যকর হলো। এতে বাজারের প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছে। চাঁদাবাজির কথা তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, ব্যবসা করলে চাঁদা দিতে হবে। এটা সর্বজন স্বীকৃত।
ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা পানছড়ি বাজার বর্জনের ঘোষণা এবং পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বাজার জমছে না বলে শুনেছি। বাজারের একটি হোটেলে প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশয়ে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নিয়ে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে। জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। এটি তো কোন মানুষই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না।
পানছড়ি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জনান, তিনি বাজার বর্জন ও চাঁদাবাজির কথা শুনেছেন। তবে লিখিতভাবে কেউ জানাননি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বাজার বর্জনের কথা স্বীকার করে বলেন, এ ঘোষণা জনস্বার্থ বিরোধী অনৈতিক কাজ। যে বা যারা কাজটি করেছে এটি একেবারে জনস্বার্থ বিরোধী। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ পাহাড়িরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করে আবার বাজার থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যায়। এটাকে নিমূল করার জন্য জনগণকে আস্থায় নিয়ে এসে বাজার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রশাসনের যা করা দরকার প্রশাসন তাই করবে এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন কাজ করছে এবং করবে।