পাহাড়ে জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ নেই, নানিয়ারচর হত্যাকান্ডে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না : বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক

প্রকাশঃ ১৬ মে, ২০১৮ ০৯:৪২:৩৪ | আপডেটঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:৫৭:১৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি ৩০৫ পদাতিক বিগ্রেডের রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরে সাধারণ মানুষের সুফল পাওয়ার কথা কিন্তু সেই সুফল তারা পাননি। আপনারা শান্তি চুক্তি করলেন, তাহলে আপনারা কিভাবে অবৈধ অস্ত্র রাখেন। এখন যদি রাষ্ট্র বলে আপনারা অবৈধ অস্ত্র ধারণ করে রেখেছেন তাই আর শান্তি চুক্তি আর বাস্তবায়ন হবে না। তাহলে কি সরকার কি অন্যায় করবে? পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্রধারীরা এখনো বিরাজমান। যেখানে সেখানে তারা অস্ত্র হাতে মানুষকে অত্যাচার করছে, চাঁদাবাজি করছে।

শান্তি চুক্তির আগে  পাহাড়ীদের তারা বুঝিয়েছে যে, তারা জুম্ম ল্যান্ড করবে। কিন্তু জুম্ম ল্যান্ডতো করতে পারেনি। তা কখনো করাও সম্ভব নয়। আপনারা সাধারণ মানুষদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের আশে-পাশে যেসব ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলো রয়েছে, তাদের ওখানেও একই সমস্যা। তাই বলে কি ভারত সেইসব রাজ্যগুলো ছেড়ে দিবে। ভারতের মত শক্তিশালী একটি দেশ কি মিজোরামকে কি অন্য একটা রাষ্ট্র গঠন করতে দিবে। কখনো না, প্রশ্নই উঠে না।  একইভাবে বাংলাদেশেও সম্ভব নয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন আয়োজিত হেডম্যান কার্বারীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  


রিজিয়ন কমান্ডার আরো বলেন, গত ৪-৩ মে নানিয়ারচর হত্যাকান্ডে ঘটনায় মামলা হয়েছে। সকলকে বলতে চাই, যারা সাধারণ মানুষ, তারা কখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন না। আপনারা নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করুন, স^াভাবিকভাবে জীবনযাপন করেন। পালিয়ে বেড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। যারা পালানোর তারা পালাবেই। কারণ তারা জানে, তারা কি করছে। সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নেই।
 
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চল থেকে সরকারের কোন রাজনৈতিকভাবে চাওয়া পাওয়া নেই, এমনকি তারা আসন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন না কিন্তু এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক, তাই আমরা উন্নয়নের স্বার্থে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে সরকারের একটাই চিন্তা, পাহাড়ের মানুষগুলো যেন ভালো থাকে, শান্তিতে থাকে।


সকাল ১১টায় রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির, রাঙামাটি জেলা হেডম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা ও জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরী বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। সভায় জেলার ১০ উপজেলার মৌজাপ্রধান হেডম্যান ও গ্রামপ্রধান কারবারি প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।



তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চল আজকে যদি মিল কারখানা হতো, আজকে পার্বত্য অঞ্চলে যদি পর্যটন বিকাশে কাজ করতে দেওয়া হতো। তাহলে আয় রোজগারের ব্যবস্থা হতো, পাহাড়ের আজকে প্রতিটি পরিবার সুখে শান্তি বসবাস করতে পারতো। জঙ্গলের ভিতর কষ্ট করতে হতো না। কিন্তু পর্যটন বিকশিত করার কাজে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। উন্নয়নের সকল কার্যক্রমে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যে একটাই তারা বাধা দিচ্ছে তাদের জন্যই। তাদের অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়ন্ত্রণ যেন টিকে রাখা যায়। সেইজন্যে বিভেদ সবসময় রাখতে চাই তারা।

কেউ কেউ বলে যারা এইসব করে তারা, কোন না কোন রাজনৈতিক দলের অংশ। আমরা বলবো না, তারা রাজনৈতিক দলের  অংশ না, তারা সুবিধাবাদী চক্র। তারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য এগুলো করে। তারা নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করে, নিজেদের টাকা উপার্জন করার জন্য তারা এইসব করে। কিন্তু তারপরের তারা কোন না কোন দলে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় নেয়। বাঁচার জন্য। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে বোঝানোর জন্য।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে মুক্ত চিন্তা, মুক্ত গণতন্ত্রের আলোকে নিজেরা রাজনীতি করবে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তার সাথে সাথে সকলকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মতবিনিময় সভায় পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করতে হবে। চিরতরে ধ্বংস করতে হবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। পাহাড়ে সন্ত্রাস দমনে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাই পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে সর্বস্তরের জনগণকে সহায়তার আহবান জানানো হয়।