নুরুচ্ছাফা মানিক, সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। ফুটফুটে মাহি এখনও বুঝতে শিখেনি অপহরণ কি। তাই হয়তো একমাস ধরে বাবা বাজারে গিয়েছে ভেবে অপেক্ষা করছে বাড়ির উঠানে। গত ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়ি এলাকায় কাঠ কিনতে গিয়ে অপহরণ হয়েছে মাহির বাবা সালাহউদ্দিন। মাটিরাঙার নতুনপাড়া এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে সালাহউদ্দিনের সাথে অপহৃত হয়েছে একই এলাকার মহরম আলী ও আদর্শপাড়ার বাহার মিয়া। গত একমাস ধরে তাদের পরিবার অজানা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। অপহরণের দুইদিন পর গত ১৮ এপ্রিল অপরিচিত নাম্বার থেকে মুক্তিপণের টাকা চাওয়ার পর চাহিদামত পরিশোধও করা হয়। তবুও ছাড়া পায়নি ওই তিনজন।
অপহৃতদের স্বজনদের কান্নায় এখনও ভারী হয়ে আছে দুই গ্রামের বাতাস। মেয়েদের বিলাপে প্রত্যক্ষদর্শীদের হৃদয় কেঁদে উঠে। কারো সান্ত¡নায় বাঁধ মানছে না স্বজনদের আহাজারীতে।
সালাহউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা রৌশন আরা বেগম জায়নামাযের উপর বসে বসে সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া করছিলেন। লোকজন দেখে দাড়িঁয়ে গিয়ে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সন্তানের সন্ধান চান। কথা হয় তার দুই বছর বয়সী কন্যা শিশু মাহির সাথে। মাহির ধারণা বাবা(সালাহ উদ্দিন) বাজার থেকে এখনও ফিরেনি। মহরম আলী মা ফুল মালা বানুও কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, একমাসে কত সাংবাদিক, পুলিশ আসলো, কেউ আমার বুকের ধনরে আনে দিতে পারলো না। বলতে বলতে আবারও বিলাপ।
বাহার মিয়ার স্ত্রী তহুরা আক্তার রাষ্ট্রের কাছে তিন মাস বয়সী শিশুর পিতৃপরিচয় ভিক্ষা চেয়ে স্বামীর(বাহার মিয়া) সন্ধান চান।
২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৭ এপ্রিল অপরিচিত নাম্বার থেকে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দশটি বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা দেয়া হয়। টাকা পাঠানো পর থেকে সব নাম্বারই বন্ধ করে রাখা হয়। দীর্ঘ একমাস অতিবাহিত হলেও এখনও তাদের কোন সন্ধান দিতে পারেনি প্রশাসন। অপহরণের ঘটনার পরের দিন সালাহউদ্দিনের বাবা খোরশেদ আলম মাটিরাঙা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান বলেন, সাধারণ ডায়েরীর সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম এগোচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল ট্রাক চালক মো: বাহার মিয়াসহ কাঠ ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন ও মহরম আলী কাঠ দেখার জন্য মহালছড়ির মাইসছড়ি এলাকায় আসে। সকাল থেকে মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলেও বিকেল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে পরের দিন ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ দাবি করে মাটিরাঙায় সাধারণ ডায়েরী করেন সালাহ উদ্দিনের বাবা খোরশেদ আলম। ১৮ এপ্রিল মুক্তিপণের টাকা দাবি করার পর থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৭ এপ্রিল মহালছড়ির ধনপতি বাজার এলাকা থেকে বাহার মিয়ার ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করলেও এখনও সন্ধান মেলেনি তিনজনের।