সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে ‘অ্যাক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন’ বা বিশেষ পর্যটন এলাকা। এতে বদলে যাবে রাঙামাটির পর্যটন চিত্র। এরই মধ্যে মাস্টার প্লান তৈরি করে সরকারকে ডিপিপি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পে ১২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠিয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় বলে জানিয়েছে, জেলা পরিষদ।
পর্যটন কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষ জানান, এ কয়দিন ধরে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। বর্তমানে পর্যটন মোটেলের কক্ষগুলো প্রায় সময় শতভাগ বুকিং থাকছে। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের আগমন বেশী থাকে। ছুটির দিনে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে রাঙামাটি। প্রতি শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনে গড়ে প্রায় হাজারের অধিক পর্যটকের রাঙ্গামাটি আগমন ঘটছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঘুরতে পর্যটন কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কাপ্তাই লেকে নৌ ভ্রমণ সহকারে জেলা প্রশাসকের বাংলো, পলওয়েল লাভ পয়েন্ট স্পট, রাজবন বিহার, চাকমা রাজার বাড়ি, সুবলং ঝরনা স্পটসহ ঘোরার জন্য আশেপাশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্পট ও স্থাপনা রয়েছে।
শহরের দোয়েল চত্ত্বরের আবাসিক হোটেল ‘প্রিন্স’ এর মালিক মো. নেছার আহম্মেদ জানান, এখন অনেক পর্যটক রাঙামাটি বেড়াতে আসছেন। আবাসিক হোটেলে পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং অব্যাহত রয়েছে। পাহাড় ধসের ঘটনার পর এবারই পর্যটক আসা শুরু হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। পাহাড় ধসের ঘটনায় দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ধরে রাঙামাটি ছিল পর্যটকশূন্য।
এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যাক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্রুত বদলে যাবে রাঙ্গামাটির পর্যটন চিত্র। গড়ে উঠবে বিশ্বমানের আধুনিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত বিভিন্ন স্থাপনা। আর রাঙামাটি পরিণত হবে আন্তর্জাতিক পর্যটননগরীতে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
রাঙামাটির পর্যটনের উন্নয়ন নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করলে স্থানীয় পর্যটন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটি আসলে পর্যটনের জন্য খুবই সম্ভাবনার অঞ্চল। এখানে পাহাড়, হ্রদ, ঝরনার সমন্বয়ে গড়া প্রকৃতি যে কাউকে আকৃষ্ট করে তোলে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনার অভাবে পর্যটনের দিক দিক থেকে রাঙ্গামাটি এখনও পিছিয়ে। তাই রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জেলা পরিষদ এরই মধ্যে ১২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে- যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এখানকার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগালে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থার পাল্টে যাবে।
বৃষ কেতু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও জেলা পরিষদ আইনের শর্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালে পর্যটন বিভাগটি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে হস্তান্তর করে সরকার। এর পর রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। অ্যাক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন গঠনে যে মহাপরিকল্পনাটি হাতে নেয়া হয়েছে- সেটি বাস্তবায়িত হলে রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আকর্ষণ যেমন বাড়বে, তেমনি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর লোকজন আত্ম-কর্মসংস্থান গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি উপার্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায়। পরিকল্পনাটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নসহ এর ব্যবস্থাপনায় একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে খসড়া পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটন উন্নয়ন বোর্ড’ নামে একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা গঠনের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ বলেন, মাস্টার প্লান অনুযায়ী রাঙামাটি শহরের ফিশারিঘাট থেকে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যে সংযোগ বাঁধটি রয়েছে, তার দুই পাশে পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের গ্যালারি নির্মাণ, উভয় দিকে আশেপাশের দ্বীপগুলোকে সংযুক্ত করতে আধুনিক মানের ক্যাবল ব্রিজ নির্মাণ, ক্যাবল কার সংযোগ স্থাপন, কাপ্তাই হ্রদের ভাসমান টিলাগুলোতে রেস্টুরেন্ট, গেস্ট হাউস নির্মাণ, সরকারি পর্যটন মোটেল এলাকায় আধুনিক মানের বিনোদন স্পট, সুইমিংপুল, ক্যাবল কার সংযোগ স্থাপন, প্যাডল বোট, ওয়াটার ট্যাক্সি চালু, শহরের জিরো পয়েন্টে লাভপয়েন্ট স্পট উন্নয়ন, লুসাই হিলে আবাসিক গেস্ট হাউস নির্মাণ, বালুখালী হর্টিকালচার এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ও ক্যাবল ব্রিজ নির্মাণ, শহীদ মিনার এলাকায় ৪০ কক্ষের একটি আবাসিক হোটেল নির্মাণ, সুবলং ঝরনা স্পটটির উন্নয়ন, নির্বাণপুর বৌদ্ধ বিহার স্পট উন্নয়ন, শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়ি এলাকায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপন, আসামবস্তী-কাপ্তাই সড়কে গ্যালারি স্টেট ভিউ সাইট নির্মাণ, ঘাগড়ায় ক্যাফেটরিয়া এবং কাপ্তাই নতুনবাজার এলাকায় থ্রি স্টার হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।