তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া নির্মুলে প্রয়োজন জনসচেতনতা

প্রকাশঃ ১৪ মে, ২০১৮ ১১:২৯:২১ | আপডেটঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১০:১০:২৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। তিন পার্বত্য (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) জেলা থেকে ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নির্মুল করার জন্য সবার আগে জন সচেতনতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। আবর্জনা পরিস্কার করতে হবে।  মশা জন্মায় এমন স্থান ধংস করে দিতে হবে। কোন অবহেলা করা যাবে না। কারো শরীরে জ্বর হলে দেরী না করে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। কারোর শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণু  পাওয়া গেলে সাথে সাথে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

বিনামূল্যে এ চিকিৎসা পাওয়া যায় ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে। পাওয়া না গেলে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ দিতে হবে এবং জরুরী সেবার জন্য ০১৭৮৭৬৯১৩৭০ নম্বরে কল করতে হবে।
সোমবার সকাল ১০ টায় রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা পর্যায়ে ম্যালেরিয়া মুক্ত শহর বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ম্যালেরিয়া মুক্ত একটি দেশ হবে। এ জন্য বড় বাঁধা তিন পার্বত্য জেলা। কারণ পার্বত্য জেলাগুলোতে এখনও  ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যাচ্ছে।  ২০৩০ সালের মধ্যে এ তিন পার্বত্য থেকে পুরোপুরি ম্যালেরিয়া নির্মুল করতে হবে।

জেলা সিভিল সার্জন শহীদ তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এক সময়ে যে ম্যালেরিয়া ছিল তা এখন নেই। এখন ম্যালেরিয়া একেবারে পকেটে চলে গেছে। এসব পকেট থেকেও ম্যালেরিয়া নির্মুল করতে হবে।

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ অতীতে যে সাফল্য দেখিয়েছে তার অভিজ্ঞতায় আগামী ২০৩০ সালে মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ম্যালেরিয়া নির্মুল করা সম্ভব হবে বলেন শহীদ তালুকদার। চলমান ম্যালেরিয়া নির্মুল কর্মসূচি সফল করতে হলে জনগণকে সচেতন হতে হবে। জনগণ সচেতন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ম্যালেরিয়া নির্মুল সম্ভব।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটির বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। বিগত ও চলমান বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর মৃত্যু শূণ্যর কোটায় রয়েছে। এর কৃতিত্ব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। জেলা থেকে ম্যালেরিয়া নির্মুলে যা যা করার দরকার তা করা হবে বলেন বৃষকেতু চাকমা।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিনোধ শেখর চাকমা।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী, জেলা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সুশোভন চাকমা, জেলা কৃষি বিভাগের প্রকৌশলী দেবাশীষ চাকমা।




কর্মশালা শুরুতে রাঙামাটি জেলার ম্যালেরিয়া চিত্র তুলে ধরেন ডা. আসাদুজ্জামান। এতে দেখা যায় রাঙামাটিতে ২০০৯ সালে ম্যালেরিয়ার রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৭ শ ৯৯ জন। এর মধ্যে মারা যায় ১২ জন। ২০১০ সালে রোগী ছিল ১৫হাজার ৪শ ৭৩ জন। এর মধ্যে মারা যায় ১০ জন। ২০১১ সালে  সালে রোগী ছিল ১৩ হাজার ৭শ ৫৪ জন। এর মধ্যে মারা যায় ৫ জন। ২০১২ সালে রোগী ছিল ৭হাজার ৯শ ৮২ জন। এর মধ্যে মারা যায় ১জন।  ২০১৩ সালে রোগী ছিল ৭হাজার ৯শ ৭০ জন। এর মধ্যে মারা যায় ২ জন। ২০১৪ সালে রোগী ছিল ১৭হাজার ১শ ৬৬ জন।  এর মধ্যে কেউ মারা যায়নি। ২০১৫ সালে রোগী ছিল ১৩হাজার ৮শ ৩৩ জন।  এর মধ্যে কেউ মারা যায়নি।  ২০১৬ সালে রোগী ছিল ৯হাজার ৬শ ২৪ জন।  এর মধ্যে মারা যায় ১ জন।  ২০১৭ সালে রোগী ছিল ৮হাজার ২শ ৮৭ জন। এর মধ্যে কেউ মারা যায়নি। ২০১৮ সালে গত মাস পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেছে ৬৫ জন। এর মধ্যে কেউ মারা যায়নি।