রাঙামাটিতে আখ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা, সাথী ফসল মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন

প্রকাশঃ ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০৮:০১:৪৫ | আপডেটঃ ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০১:৪২:৪৫

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির পাহাড়ে আখ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এবছর আখের পাশাপশি সাথী ফসল হিসাবে বাম্পার ফলন হয়েছে মিষ্টি আলুর । পাহাড়ি পতিত জমিতে আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসাবে সবজীর চাষ করে প্রচুর লাভবান হয়েছেন চাষীরাা। আখের পাশাপশি একই জমিতে সব্জী আবাদে ভাল ফলন হওয়ায় পাহাড়ে আখ চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।  
পাহাড়ি মাটি কৃষি আবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনস্টিটিউট ২০১২ সাল থেকে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় কাজ শুরু করে। তামাককে নিরুৎসাহিত করে পাহাড়ি পতিত জমিতে আখ চাষে স্থানীয় চাষীদের উদ্ধুদ্ধ করছেন তারা। এরই মধ্যে তামাকের পরিবর্তে আখ চাষে এগিয়ে এসেছেন অনেকে।
চলতি বছর রাঙামাটির সদর ও কাউখালী উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এ সব জমিতে আখের সাথে সাথী ফসল হিসাবে চাষ হয়েছে মিষ্টিআলু, গাজর, সিমসহ ১৭টি সবজির। কাউখালীর বগাপাড়া গ্রামের কৃষানী তাপসী চাকমা জানান তার আখের জমিতে আখের পাশাপশি সাথী ফসলের মধ্যে অনেক বেশি ফলন হয়েছে মিষ্টি আলুর। কাউখালীর সাক্রাছড়ির আখ চাষী পরিতোষ কার্বারী জানান মিষ্টি আলু ফলন এত বেশি হয়েছে যে আখ চাষীরা এবার ভালো লাভ পেয়েছে। মিষ্টি আলু   বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে বলে তিনি জানান। আখের দুই সারির মধ্যবর্তী জমিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করায় এবার অন্য যে কোন ফসল থেকে মিষ্টি আলুর চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষকরা ।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনিষ্টিটিউট রাঙ্গামাটির বৈজ্ঞানিক সহকারী নিকসন চাকমা, রাঙ্গামাটির সদর ও কাউখালী উপজেলায় ১৮ জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে চুষে খাওয়া ও গুড় তৈরীর আখের জাত রয়েছে বলে জানান তিনি । পাহাড়ের আখ ক্ষেতে ফলন কেমন তার গবেষনা চলছে।
আখের জাত গুলোর মধ্যে রয়েছে আই এস ডি ( ঈশ্বরদী) -২৬, আই এস ডি ( ঈশ্বরদী) -২৪, আই এস ডি ( ঈশ্বরদী) -৩৮, আই এস ডি ( ঈশ্বরদী) -৪০,বিএস আর আই -৪১ অমৃত ( চুষে খাওয়া ও গুড় তৈরীর জাত) , বিএস আর আই -৪২ রংবিলাস, ( চুষে খাওয়ার জাত, যা পার্বত্য এলাকার জন্য খুবই উপযোগী), বিএস আর আই -৪৩, বিএস আর আই -৪৪ বিএস আর আই -৬৯( অস্ট্রেরিয়া) , ভি এম সি-৮৬-৫৫০ ( ফিলিফাইন)। সি ও -২০৮-( ভারত) ও চায়না-( চীন) জাত,( চুষে খাওয়ার জাত, যা পার্বত্য এলাকার জন্য খুবই উপযোগী) আখের চাষ হচ্ছে। এর গবেষনার জন্য চাষ হচ্ছে চুষে খাওয়া আখ রণাঙ্গন ( গুড় জাত), মিশ্রীমালা ও মধুমালা, বনপাড়া গেন্ডারী টাঙ্গাইল গেন্ডারী, ও চাদ৭পুরী গেন্ডারী জাতের আখ।
রাঙামাটিতে আখ চাষের পাশাপাশি কম খরচে সবজি চাষে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। কারণ তামাকের চেয়ে আখ চাষে লাভ বেশী পাচ্ছে কৃষক।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনিষ্টিটিউট রাঙামাটির উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তংচঙ্গ্যা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও কৃষি গবেষনা ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে দুটি প্রকল্পের মধ্যে একটি সম্প্রসারণ মুলক ও দ্বিতীয়টি গবেষনামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।  বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষনা ইনিষ্টিটিউট রাঙামাটি সদর ও কাউখালীতে গবেষনা কার্যক্রম আর ৪টি উপজেলা নানিয়ারচর, বাগাইছড়ি, জুরাছড়ি, ও কাপ্তাই উপজেল্য়া আখের চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সুগারক্রপ গবেষনা ইনিষ্টিটিউট আক চাষে ১৭ জাতে সব্জী আবাদের জন্য চাসেিদর উদ্ধুদ্ধ করেছে।
তিনি জানান,তামাকের চেয়ে আখ চাষে লাভ বেশি। পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় ঠিক থাকে জমির উর্বরতাও। তাই আখ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠায় পাহাড়ে তামাক চাষের আগ্রাসন কমতে শুরু করছে। আগামীতে পাহাড়ের আখ চাষ ও  তারসাথী ফসল  হিসাবে বিভিন্ন সব্জীর আবাদে বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটি সহ অপর দুই পার্বত্য জেলার কৃষিতে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।