প্রকাশঃ ০৫ অগাস্ট, ২০১৯ ০৩:১৬:৩৪
| আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ০৩:৪৩:৫৪
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। গেল মাসে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে বান্দরবানের কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষকেরা অনেকেই বেশি লাভের আশায় বাগান থেকে বিক্রি করেনি অনেক ফল,কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে জেলার বেশিরভাগ আবাদি জমি,আর এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এখন কষ্টে দিনযাপন করছে জেলার কৃষকেরা।
বান্দরবান জেলা সদরের রেইচা,গোয়ালিয়া খোলা, সুয়ালক,মাঝের পাড়াসহ রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার বেশিরভাগ ফসলি জমি এখন নষ্ট। টানা বৃষ্টি আর বন্যায় কৃষি জমিতে সপ্তাহব্যাপী পানি জমে থাকায় কৃষকেরা এখন মরনদশায় পড়েছে। এক দিকে বেশি সুদে লোন নিয়ে জমি চাষ করা আর অন্যদিকে বন্যার পানিতে সব ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিনযাপন করছে ।
বান্দরবানের রেইচা গোয়ালিয়াখোলা ২নং ওয়ার্ডের কৃষক মো:রুস্তম আলী জানান,“এ বছর ৮ খানি পেঁপে বাগান করেছি,কিন্তু বন্যার পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। পেঁপে একটু পরিপক্ক হলে বিক্রি করবো বলে বাগান বিক্রি করিনি,কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় আমার প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গেল ”। কৃষক মো:রুস্তম আলী আরো বলেন,শুধু পেঁপে বাগানই নয় আমার অনেক আবাদী জমি নষ্ট হয়ে গেছে,এখন সরকারিভাবে যদি আমাদের সহযোগিতা করা হয় তবে আমরা আবার কৃষিকাজ করতে পারবো।
বান্দরবানের রেইচা গোয়ালিয়াখোলা ২ নং ওয়ার্ডের কৃষক মো:কবির আহম্মদ বলেন, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে বান্দরবানের কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমার ২ খানি পেঁপে বাগান মরে শেষ। ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে ,আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ৩দিন পানির মধ্যে বসবাস করেছি ।
একই এলাকার কৃষক মো:দিদার বলেন,বন্যায় আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল। চড়া সুদে আমরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোন নিয়েছি এখন বাগান ও নষ্ট, সব সম্বল পানিতে শেষ। মো:দিদার আরো বলেন, আমাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের কৃষি ঋণ মওকুফ ও সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে আমরা কিছুটা হলে ও ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারবো ,নয়তো আমাদের কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে হবে।
কৃষি বিভাগ বলছে এবারের বন্যায় নষ্ট হয়েছে জেলার পেঁেপ,বেগুন,পান,বরবরটি শসা,আমন বীজতলাসহ বেশিভাগ জমির ফসল,আর সরকারি হিসাবে জেলা সদরে কৃষিখাতে ক্ষতির পরিমান দাড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ২৬লক্ষ টাকা।
সাম্প্রতিক বন্যায় ৩ দিন পানির নিচে ছিল বান্দরবানের রেইচা এলাকার বেশিরভাগ আবাদি জমি।আর এর ফলে কৃষকের পেঁপে বাগান,বেগুন বাগান,বরবটি বাগান,ঝিঙ্গা বাগানসহ বেশিরভাগ আবাদি জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে ।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো:ওমর ফারুক বলেন,এবারের বন্যার কারনে বান্দরবানে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা অনেকেই নি:স্ব হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮ হেক্টর আবাদী জমি রয়েছে এবং এবারের বন্যার পর আমরা ক্ষতির পরিমান বের করেছি যা সরকারি হিসেবে আনুমানিক প্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। কৃষি কর্মকর্তা মো:ওমর ফারুক আরো বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করেছি এবং এই তালিকা আমরা উর্ধতন কৃর্তপক্ষের বরাবর প্রেরণ করেছি ,আশা করি উর্ধতন কৃর্তপক্ষের নির্দেশে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পাশে থাকতে পারবো এবং তাদের জন্য বরাবরের মত প্রশিক্ষণ , বীজ ,সার প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অব্যাহত রাখা হবে।
কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠাতে কৃষি ঋণ মওকুফ ও সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাবে কৃষি বিভাগ, এমনটা প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।