রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে পদ-প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ শুরু

প্রকাশঃ ১৯ জুলাই, ২০১৯ ০৯:৫৭:৫৫ | আপডেটঃ ০৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০৫:৫৭:৪৭
শাহ আলম, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ অনুযায়ী রাঙামাটিতে নেতৃত্ব তৈরির কারখানা অন্যতম ইউনিট রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী শক্রবার (২৬জুলাই)।

সামনে সম্মেলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। পদ-প্রত্যাশীরা ভোটারদের ধারে ধারে গিয়ে দিচ্ছেন ধরণা ও নানা প্রতিশ্রুতি। এছাড়াও নেতাদের লবিং-তদবির আর দৌড়ঝাপ বেড়েছে বহুগুণে।

এ ছাড়া শহরের বনরুপা, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজারসহ জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাসায় দৌড়ঝাপ বৃদ্ধি পেয়েছে কলেজ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের।

সম্মেলনকে ঘিরে রাঙামাটি সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস এখন সরগরম। প্রতিদিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চায়ের আড্ডায় আলোচিত হচ্ছে ক্যাম্পাসসহ শহর ও শহরতলী। প্রতিদিন ছাত্রলীগের এই আড্ডার ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে সংগঠনটি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাঝেও উৎসুক প্রশ্ন কে হচ্ছেন রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক। কে দিবে রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আগামীর নেতৃত্ব?

সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজপথে থেকে সংগঠনটি মিছিল মিটিংয়ে সরব ছিল। শহরে তাৎক্ষনিক ভাবে ছাত্রলীগ মিছিল করার শক্তি অর্জন করেছিল। এদিকে কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটি চাঙ্গা হলেও অতীতের বিভেদের রেখা থেকে কলেজ ইউনিটটি নেতা-কর্মীরা এখনো বের হতে পারেনি। তবে বড় দল হিসেবে তো গ্রুপিং লবিং থাকবেই।

তৃণমূল কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্ভাব্য সভাপতি পদে অনেক নামের পাশাপাশি বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মুন্না দে, মোঃ মাঈন উদ্দীন (ইমন), বিজয় দে, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান ও মোঃ নাজিম উদ্দিন সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন।

এছাড়াও বর্তমান কমিটির যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মোঃ তারেক হোসেন মাহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপংকর দে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন শোনা গেলেও এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। সভাপতি পদে নাকি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন।  
যদিও সবচেয়ে বেশি মোঃ তারেক হোসেন মাহিম ও দীপংকর দে এই দুই নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে। কলেজ ইউনিটের মধ্যে তাদের সমর্থন ও নিজস্ব ভাবমূর্তি রয়েছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, মোঃ রনি হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক মোঃ আল্লাহ উদ্দিন টুটুল সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও কমিটির ও কমিটির বাহিরে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কে কে নির্বাচন করবেন, নির্বাচনের মাঠে ঠিকে থাকবেন, তা এখন দেখার বিষয়।

জানা গেছে, দীপংকর দে সাংগঠনিক কর্মী  হিসেবে পরিচিত। হঠকারী রাজনীতির বিপরীতে দীপংকর বেশ গণতন্ত্র মনা। তার হাতে নেতৃত্ব দিলে দলটির সাহংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী হবে এমন কথা উচ্চারিত হচ্ছে তৃণমূল্যের নেতা-কর্মীদের মুখে।

অন্যদিকে তারেক হোসেন মাহিম সভাপতি নাকি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবেন তা নিশ্চিত এখনো করা না গেলেও, শোনা যাচ্ছে তার সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। তাকে সভাপতি করা হলে তারুণ্য নির্ভর একটি সংগঠন হিসেবে কলেজ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে তৃণমূল কর্মীদের কাছে।

সভাপতি হিসেবে অন্যান্য নেতাদের নামও নানা স্থানে আলোচনায় আসছে এবং তারাও নিয়মিত কলেজ ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন ও ভোটারদের সাথে সময় দিচ্ছেন। এদিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকটি নাম আলোচিত হচ্ছে।

গত ২০১৬ সালের বুধবার (৯ নভেম্বর) রাঙামাটি সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাপ্পা ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদ এর দু’গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমিটি সকল কার্যক্রম স্থগিত করে জেলা ছাত্রলীগ।

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন বলেন, রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আগামী শক্রবার (২৬জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে। কোন কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হলে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও স্থানীয় এমপি দীপংকর তালুকদারের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করা হবে।

তিনি আরো জানান, রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সম্মেলন পরবর্তী ভোটের মাধ্যেমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্বের উত্থান হবে। মনোনীত করার মাধ্যমে নেতৃত্ব আনায়নের কোন সুযোগ নেই। কমিটিতে নেতিবাচক কোনো নেতা-কর্মীর স্থান হবে না। মানবিক ও সৃজনশীল নেতাদের স্থান দেওয়া হবে। জেলা ছাত্রলীগ এ বিষয়ে কোনো আপস করবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বুধবার (৯ নভেম্বর) রাঙামাটি সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাপ্পা ও কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদ এর দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এসময় সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদসহ ৫ ছাত্রলীগ কর্মী হামলায় গুরুতর আহত হন। রিয়াদের চোখের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।

এর পরের দিন বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুলল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

ঐ সময়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ২বছর ৮মাস হয়ে গেলেও বর্তমানেও তা স্থগিত রয়েছে।