সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পর্যটন শহর রাঙামাটি এর সৌন্দর্য্য বর্ধন ও রাঙামাটি পৌরসভার বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ধীরগতিতে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, শহরের একমুখী রাস্তার দুই পাশে কাজ অর্ধেক করে ফেলা রাখা এবং শেভরন ডায়াগনিষ্ট সেন্টার থেকে বনরুপা পর্যন্ত ড্রেনের কাজ করলে এটি অর্ধেকে পড়ে আছে। বৃষ্টি হলেই বনরুপা চৌমুহনী এবং কাঁচাবাজারে পানি জমা যায়, এতে দুর্গন্ধ হয় চারপাশের পরিবেশ। রাস্তার দুপাশে যাতায়াতে ফুটপাত দৃষ্টি নন্দন করতে টাইলস বিছানোর কাজ চললেও কাজে নিম্নমানের টাইলস ও টাইলসের কাজে ফ্রুটিং ব্যবহার না করে কেবল বালু সিমেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৮কোটি টাকা ব্যয়ে টাইলস, কালভার্ট ও রাস্তা সংস্কারের কাজ পৌরসভার উদ্যেগে এই উন্নয়ন কাজ চলমান থাকলেও কাজ তদারকিতে কোন প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে কাজ ঠিকঠাক চলছে, তাদের জনবল এর সংকট রয়েছে।
পর্যটন শহরের সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধি ও পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ঘাট সিড়ি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ইউজিআইআই-পি (তৃতীয় নগর উন্নয়ন প্রজেক্ট) এর আওতায় প্রায় ৩টি প্যাকেজে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২টি প্রকল্পের কাজ তৃতীয় নগর উন্নয়ন প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সনের শেষের দিকে অনুমোদন দিলেও কাজ শুরু হয় ২০১৬ সন থেকে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ইউজিআইআই-পি (তৃতীয় নগর উন্নয়ন প্রজেক্ট) এর কাজ তিন দফায় কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভাগুলোকে দেয়া হয়। তার মধ্যে রাঙামাটি পৌরসভাকে প্রথম দফায় ১৮কোটি টাকা, দ্বিতীয় দফায় বর্তমান চলমান আরো ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। জুনে আরো ৪২ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ এসেছে কিন্তু কাজের ধীরগতিতে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, গত দুই বছর ধরে শহরের একমুখী রাস্তার দুই পাশে যাতায়াতে ফুটপাত দৃষ্টি নন্দন করতে টাইলস বিছানোর কাজ চলছে। শহরের বাস টার্মিনাল থেকে টিএন্ডটি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ফুটপাতের কাজ নিয়মিত করলে যেখানে ৫/৬ মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা সেখানে ৩ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এছাড়া কাজে নিম্নমানের টাইলস ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। টাইলসের কাজে ফ্রুটিং ব্যবহার না করে কেবল বালু সিমেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টাইলস করা ফুটপাত থেকে টাইলস উঠে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এদিকে চলমান ২৮ কোটি টাকার কাজ চলতি বছরের মাচর্চ মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেশীর ভাগ কাজ-ই শেষ হয়নি।
এছাড়া রাস্তার দুপাশে টাইলস করা ফুটপাতের উপর কাচা তরকারি নিয়ে ব্যবসায়ীদের বসা, রাস্তার দুপাশে খোড়াখুড়ি করে উঠানো মাটিগুলো না সরানোর কারনে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে কাজ ঠিকঠাক চলছে, তাদের জনবল এর সংকট থাকার কারনে সব কাজ প্রতিদিন তদারকি করা সম্ভব হয় না, কাজের মান যেন ঠিক থাকে সেদিকে তাদের লক্ষ্য রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পথচারীরা জানান, পর্যটনের শহরের সৌন্দর্য্যর জন্য টাইলসের কাজটি ভালো হলেও এতো সময় লাগার কথা না,কাজের মান ও ধীরগতির কারনে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন টাইলস বিছানোর ২/১ মাসে যেখানে টাইলস উঠে যায় সেখানে এক বছরে কি অবস্থা হবে সেটা বোঝা যায়।
বনরুপা কাচাবাজার এবং প্রদীপ ড্রাগ হাউজের সামনে দিয়ে পথচারীরা বিষাক্ত পানি ও দুর্গন্ধের জন্য চলাচল করতে পারছে না। টিএন্ডটি অফিসের সামনে ময়লা আর্বজনার স্তুপ থাকায় সেখানে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।
টাইলস বিছানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ফ্রুটিন না দেয়ার বিষয়ে জানিয়েছে কাজ শেষ হওয়ার পর ফ্রুটিন দেয়া হবে, কাজের মান ঠিক আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আবু তৈয়ব ফেব্রƒয়ারী মাসে জানিয়েছিলেন, দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করবেন, ফিনিশিং করার সময় ফ্রুটিং দেয়া হবে, কিন্তু জুন মাস শেষ হতে চললেও কাজ রোজার আগ থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনি আরো জানান, অনেকে টাইলস ব্যবহার জানে না , টাইলসের উপর রড সিমেন্ট এবং গ্যাস সিলেন্ডার রাখায় কোন কোন জায়গায় টাইলস ভেঙ্গে যাচ্ছে।
কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে বলেন, কাজ শুরু হয় কবে শেষ হবে তার কোন ডেটলাইন আমরা দেখছি না, কাজে কাউকে তদারকি করতেও দেখা যায় না, একটি কাজের জন্য দুবার তহবিল দেয়া হবে না, এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। দ্রুত কাজ শেষ করা দরকার।
বিষযটি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুলইসলাম, তিনি বলেন, এটা মেয়র স্যার ভালো বলতে পারবেন।
তবে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী অভিযোগ গুলো এড়িয়ে গিয়ে জানান, বর্ষার আগে আমরা কাজ গুলো শেষ করব, সে জন্য দ্রুত কাজ করছি, এতে ত্রুটি হলে আমরা সেগুলো পুনরায় ঠিক করে দিব, ফুটপাত থেকে টাইলস উঠে যাওয়া বিষয়ে বলেন, জনগনকেও সচেতন হতে হবে।
রাঙামাটির পৌরসভার কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বয়ং রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, মেয়র সাহেবকে দ্রুত শেষ করতে অনুরাধ করলেও কেন করছেন না, বুঝতে পারছি না। মেয়র সাহেব আইন শৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সভায় যখন আসেন তাকে কাজটা শেষ করতে বলি উনি প্রতিশ্রতি দিলেও রক্ষা করছেন না। কাজটা শেষ না করাতে শহরের সৌন্দর্য্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বর্ষায় ভোগান্তি জনগনের বাড়বে।