আড়াই মাস পর রাঙামাটির তিন উপজেলায় নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল শুরু

প্রকাশঃ ২২ জুনe, ২০১৯ ০৬:৪০:০৪ | আপডেটঃ ১৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৩৮:০৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। তীব্র তাপদাহ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক ভাবে পানি কমে যাওয়ায় হ্রদের নাব্যতা হ্রাস পেয়ে বরকল,জুরাইছড়ি,লংগদু,নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়িসহ ৫উপজেলায় গত আড়াই মাস ধরে নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে জেলা নৌ- পরিবহন লঞ্চ মালিক সমিতি।

শনিবার (২২জুন) থেকে বরকল,জুরাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা সদরে মালিক সমিতির লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। হ্রদে পানি না থাকায় বাকি নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় এখনো লঞ্চ সার্ভিস চালু করতে পারেননি বলে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টি হয়ে পানি বাড়লে ওই দুই উপজেলায় সমিতির লঞ্চ চালু করা হবে।

জানা যায়- দক্ষিন এশিয়ার সর্ব বৃহৎ কৃত্রিম হ্রদ হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬০ সালে এ কৃত্রিম হ্রদটির যে গভীরতা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল তা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় উজান থেকে পাহাড়ী ঢল নেমে এসে পলি জমে হ্রদের গভীরতা হ্রাস করেছে। হ্রদের গভীরতা হ্রাস পেয়ে বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠেছে। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে সঠিক ভাবে বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে নৌ-পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটির সৃষ্টির ৫৯ বছরেও সরকারের পক্ষ থেকে হ্রদটির জমে থাকা মাটি খনন কিংবা ড্রেজিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অধ্যাবধি। যার কারনে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পলি জমে হ্রদটি ভরাট হওয়ায় এ করুন অবস্থা বিরাজ করছে। এ হ্রদটি শীঘ্রই খনন কিংবা ড্রেজিং করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদটি হারিয়ে যাবে। এর ফলে মানুষের আর্থ- সামাজিক অবস্থা ও জীব বৈচিত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে পরিবেশবাদীদের আশংকা।

জেলার ১০উপজেলার মধ্যে ৮উপজেলায় জেলা সদর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও বরকল ও জুরাইছড়ি এ দু উপজেলায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের জন্য একমাত্র নৌ- পথ ছাড়া কোন সড়ক পথ নেই।

বরকল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শ্যামরতন চাকমা ও জুরাইছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন- শুস্ক মৌসুমে প্রতি বছর হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে বরকল ও জুরাছড়ি দু উপজেলার মানুষদের উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়নে কিংবা জেলা সদরে যাতায়াত করতে অর্বণনীয় দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয়। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় গত আড়াই মাস ধরে এ দুই উপজেলার মানুষদের ছোট ছোট ট্রলার বোটে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

তারা আরো বলেন-নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনেও দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া দিয়ে জেলা সদর থেকে নিয়ে আসায় ওসব মালামাল উপজেলার সাধারন ক্রেতাদের কিনে নিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে একদিকে আর্থিক অন্য দিকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে এ দুই উপজেলার সাধার মানুষদের।

জেলার নৌ- পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মঈনুদ্দিন সেলিম জানান- গত আড়াই মাস ধরে মালিক সমিতির লঞ্চ চলাচল করতে না পারায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জেলার কয়েকটি উপজেলার মানুষদের। ছোট ছোট ট্রলার বোটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তারা প্রতিটি যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন তিনগুন ভাড়া নিয়ে মালিক সমিতির ঘাড়ে বদনাম ছাপাতে চেয়েছেন। লাইনে যেহেতু মালিক সমিতির কোন লঞ্চ নেই সেহেতু দ্বিগুন তিনগুন ভাড়ার সাথে মালিক সমিতি কোন ভাবে সম্পৃক্ত ছিল না। বৃষ্টি হয়ে কাপ্তাই হ্রদে সামান্য পানি বেড়েছে  তাই শনিবার (২২জুন) থেকে মালিক সমিতি বরকল জুরাইছড়ি ও লংগুদু উপজেলা সদরে লঞ্চ সার্ভিস চালু করেছে।

যাত্রীদের ভাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান- জেলা সদর থেকে উপজেলা সদর গুলোতে বিরতিহীন লঞ্চের কেবিনে ১২০ টাকা নিচ তলায় ১০০টাকা। লোকাল লঞ্চের কেবিনে- ১০০টাকা আর নিচ তলায় ৯০ টাকা হারে আপাতত প্রতিটি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে। তবে হ্রদে যখন পানি হবে তখন বিরতিহীন ও লোকাল লঞ্চের পুরানো নির্ধারিত ভাড়া বলবৎ করা হবে।

সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম আরো বলেন- হ্রদে পরিপূর্ন পানি হওয়ার পরে জেলা সদর থেকে বরকল ও ছোট হরিনা বাজার পর্যন্ত বিকালের যে লোকাল সার্ভিসটি দেয়া হয় সেটি বিরতিহীন সার্ভিস করা হবে। জেলা সদর থেকে সুভলং বরকল ভুষনছড়া ও সরাসরি ছোটহরিনা বাজার ঘাটে ভিড়বে। মাঝ পথে আর অন্য কোন ঘাটে লঞ্চ ভিড়বে না। এটি বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের যাতায়াতের সুবিধার্থে লোকাল থেকে বিরতিহীন সার্ভিস চালু করা হবে।