প্রকাশঃ ০৬ মে, ২০১৮ ০২:০৬:১৭
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৮:০০:৫৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সংঘাতে উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম। এর নেপথ্যে আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার। একের পর এক হানাহানি খুনোখুনির ঘটনায় আতঙ্কে পাহাড়ের মানুষ। যে কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ও গন্তব্যে চলাচল করতেও সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। কখন কী ঘটে, এমন আশঙ্কায় অনেকে ঘর হতে বেরও হচ্ছেন না। কমে গেছে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কসহ নানিয়ারচর এলাকার আশেপাশে মানুষের ঘোরাফেরা। আবার নতুন করে পাহাড় হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত, রক্তাক্ত। পাহাড়জুড়ে বিরাজ করছে অশান্তি। অবনতি ঘটে চলেছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির।
২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফের সাবেক সামরিক উইংয়ের প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আত্মপ্রকাশ করে। যিনি (বর্মা) দল গঠনের মাত্র ৬ মাসের মাথায় শুক্রবার তিন সহকর্মীসহ নির্মমভাবে খুনের শিকার হলেন এক সময়ের সহকর্মী প্রতিপক্ষীয় অস্ত্রধারীদের গুলিতে। বর্মার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ প্রায় দেড় ডজন মামলা ছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) আত্মপ্রকাশের ২০ দিনের মাথায় আবার নতুন করে শুরু হয় সংঘাত। ঘটতে থাকে একের পর খুনের বদলে খুন। বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে ব্রাশফায়ারে খুন করা হয় নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে। শুক্রবার নির্মম বুলেটে খুনের শিকার হন গাড়ি চালক ও তিন সহকর্মীসহ ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)’এর প্রধান। এ নিয়ে গত ৬ মাসের ব্যবধানে পাল্টাপাল্টি হামলায় গুলিতে প্রাণহানি ঘটে কম্পক্ষে ৩০ জনের। অপহরণের শিকার হন ইউপিডিএফ সমর্থপুষ্ট এক নারী সংগঠনের দুই নেত্রী। প্রতিপক্ষের গুলিতে নানিয়ারচরে প্রথম হত্যার শিকার হন ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ইউপিডিএফ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা। একই দিন রাতে পৃথক ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান জুরাছড়ি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমা। এরপর একে একে ঘটতে থাকে পরবর্তী হত্যাকান্ডগুলো। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন পাহাড়ের মানুষ। থমথমে এলাকার পরিস্থিতি। হঠাৎ মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। যা সামাল দিতে হিমশিম প্রশাসন। বিশেষ করে শক্তিমানকে প্রকাশ্যে হত্যার পর মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে রাঙমাটি-খাগড়াছড়ি প্রধান সড়কে প্রকাশ্যে ফের ৫ জনকে ব্রাশফায়ারে খুন করার ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়ে মানুষ সবাই। শঙ্কিত কখন কী ঘটে যায়, তা নিয়ে। যে কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতেও সাহস পাচ্ছেন না।
এসব হানাহানি ও হত্যায় সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো একে অপরকে দোষারোপ করলেও উভয়পক্ষে অস্বীকার করা হচ্ছে। নানিয়ারচরে শক্তিমান চাকমা এবং বর্মাসহ ৫ জনকে খুনের ঘটনায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের নেতা শ্যামল চাকমা ও জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের কেন্দ্রীয় নেতা প্রশান্ত চাকমা ইউপিডিএফ জড়িত বলে দাবি করেছেন। তারা বলেছেন, প্রসিত বিকাশ খীসার নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। প্রসিতের নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরপক্ষে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফ। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা শান্তিদেব চাকমা বলেন, এসব ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্তা বা কেউ জড়িত নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদেরকে জড়ানোর চক্রান্ত চলছে। এসব ঘটনা ঘটছে নিজেদের দলে অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে। তাছাড়া ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামধারী নব্যমুখোবাহিনী এবং সংস্কারবাদী জেএসএস আমাদের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর চরম নির্যাতন ও গণবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে। শেষে নিরূপায় ও বাধ্য হয়ে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় জনগণ প্রতিহত করতে শুরু করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। আমরা কোনো ধরনের সংঘাত হানাহানি চাই না। আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। অতএব ওই দুটি গ্রুপের লোকজনকে জনগণের ওপর নির্বিচার অত্যাচার বন্ধ করে জনগণের কাতারে এসে গণমুখি আন্দোলনে শরীক হতে হবে। তবে হানাহানি বন্ধ হবে।
বর্তমানে এসব পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মুখপাত্র সজীব চাকমা বলেছেন, মূলত পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলেই কেবল সম্ভব পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সবাইকে একযোগে আসা উচিত।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতা আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেছেন, পাহাড়ে যেসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে তা কখনও কাম্য নয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সশস্ত্র সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করা না হলে এখানে কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে অবৈধ অস্ত্রধারীরা এসব হানাহানি, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজির সাহস পাচ্ছে।