রোহিঙ্গাদের দেয়া ত্রাণের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বিভিন্নস্থানে

প্রকাশঃ ১৯ জুনe, ২০১৯ ০৪:৩১:১৩ | আপডেটঃ ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:২৮:৫৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তায় প্রতিদিন পাচ্ছে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী। প্রতি রোহিঙ্গা পরিবারের একাধিক সদস্য ত্রাণকার্ড সংগ্রহ করে প্রায় পাচ্ছে সরকরি ও বেসরকারি ত্রাণ। কিন্তু  পরিবারের যা দরকার তার বেশি অতিরিক্ত ত্রাণ সংগ্রহ করে খোলা বাজারে দেদারসে বিক্রি করছে তারা। এতে প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। আর রোহিঙ্গাদের এসব পণ্য সূলভ মূল্যে যত্রতত্র বিক্রি করায় বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে স্থানীয় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে। এই দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গারা। এসব ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে চাল, ডাল, সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বেশি ত্রাণ পাওয়ায় কতিপয় অসাধু ব্যাবসায়ী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কম দামে এসব ত্রাণ সংগ্রহ করে বান্দরবানে নিয়ে এসে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। নিম্মমানের সাবান,পেস্ট,পুষ্টি পাউডার,তেল,ডালসহ বিভিন্ন মেয়াদ উর্ত্তীণ মালামাল ফুটপাতে রেখে যেনতেনভাবে বিক্রি করছে সাধারণ জনসাধারণের কাছে ।

বান্দরবান বাজারে রোহিঙ্গা মালামাল বিক্রেতা মো:লোকমান বলেন,আমরা কম দামে রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে চাল, ডাল,কম্বল,ছাতা,সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনে বান্দরবান নিয়ে আসি এবং বান্দরবানের বাজারে বিক্রি করি।আমরা অল্প লাভ করে এই ব্যবসা করে বেশ ভালোই চলছি।


বান্দরবান বাজারে রোহিঙ্গা মালামাল বিক্রেতা মো:শাহআলম বলেন,আমি কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের দেয়া মালামাল নিয়ে বান্দরবানে আসি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করি।

এদিকে কমদামে এইসব মালামাল কিনতে পারায় সাধারণ জনসাধারণ ভীড় জমাচ্ছে এইসব ফুটপাতের দোকানে। রোহিঙ্গাদের দেয়া মালামাল কিনতে আসা পলাশ রায় বলেন,কম দাম তাই রাস্তার ধার থেকে রোহিঙ্গাদের দেয়া মালামালগুলো কিনে নিচ্ছি ।  আমরা স্বল্প আয়ের লোক তাই রাস্তার ধার থেকে কমমুল্যে রোহিঙ্গাদের মালামাল কিনে নিচ্ছি।
 


এদিকে রোহিঙ্গাদের এাণের পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্মমানের টুটপেস্ট,সাবান,মসুর ডাল ও বেশ কিছু সামগ্রি বিক্রি করছে আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনসাধারণ ও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান,এইসমস্থ রোহিঙ্গাদের মালামাল যেখানে সেখানে বিক্রি হওয়ায় পন্যের মান কমে যাচ্ছে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ।


বান্দরবান বাজারের টাইম এন্ড সাউন্ড দোকানের কর্মচারী সুজন বলেন,আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ভালো মানের ইলেকট্রনিক মালামাল কিনে দোকানে বিক্রি করি কিন্তু কিছু অসাধু দোকানদার চায়না ও রোহিঙ্গাদের দেয়া কিছু নিম্মমানের সামগ্রী রাস্তার ধারে কম দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে । রোহিঙ্গাদের বিতরণকৃত অনেক সামগ্রীর মেয়াদ ও নেই যা তারা অশিক্ষিত মানুষককে ঠকিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।




বান্দরবান বাজারের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, কিছু অসাধু দোকানদার বান্দরবানে রোহিঙ্গাদের দেয়া ফেয়ার এন্ড লাভলী,বিভিন্ন তেল,দুধ পাউডারসহ নিম্মমানের পণ্য নিয়ে রাস্তার ধারে কম দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে ,আর এতে আমরা বৈধভাবে লাইসেন্স নিয়ে ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করে ও ক্রেতা হারাচ্ছি দিন দিন। নিম্মমানের পণ্য কিনে ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে । আমরা চাই শীঘ্রই প্রশাসন সড়কের ধারে যেনতেনভাবে অবৈধভাবে বসা নিম্মমানের পণ্য বিক্রিতে অভিযান পরিচালনা করবে এবং প্রতারক ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করবে।


এদিকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানান,ফুটপাতে বিক্রি করা যে কোন খোলা খাবার ও প্রসাধনী সামগ্রী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ,আর এইসমস্ত খোলা খাবার ও প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে জনগণকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা বলেন,সড়কের ধারে ফুটপাতে বিক্রি করা যেকোন দ্রব্য কিনতে আমাদের সচেতন হতে হবে। মেয়াদউত্তীর্ণ সাবান,পাউডার,ডাল,দুধসহ যেকোন খাদ্যদ্রব্য মান ঠিক আছে কিনা তা আমাদের সকলের যাছাই করতে হবে।মেডিকেল অফিসার প্রত্যুষ পল ত্রিপুরা আরো বলেন,বান্দরবানের প্রশাসনের উচিত বেশি বেশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা এবং মেয়াদউর্ত্তীণ দ্রব্য বিক্রিতে বাঁধা ও ব্যবসায়ীদের তদারকি করে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।




যেনতেন ভাবে সুলভ মূল্যে নিম্মমানের এইসমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হলে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কোন কার্যকরি পদক্ষেপ,তবে বাজার পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে নিম্ম মানের সামগ্রী বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো:নোমান হোসেন বলেন,বান্দরবানের বিভিন্নস্থানে রোহিঙ্গাদের দেয়া হচ্ছে সাবান,পেস্ট, পুষ্টি পাউডারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কতিপয় ব্যাবসায়ী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কম দামে সংগ্রহ করে বান্দরবানে বিক্রি করছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি ,আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে যেকোন মেয়াদউত্তীর্ণ জিনিস ও নিম্মমানের দ্রব্য বিক্রিতে ব্যবসায়ীদের সর্তক করবো।

বান্দরবানের যেখানে সেখানে রোহিঙ্গাদের মালামাল বিক্রি হওয়ায় ক্রেতার অভাবে আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন প্রকৃত  ব্যবসায়ীরা,তাই নিয়ম মেনে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও রোহিঙ্গাদের ত্রাণের মাল বিক্রিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।