গত দুই বছরেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি রাঙামাটির সড়কগুলো

প্রকাশঃ ১৩ জুনe, ২০১৯ ০৮:০৭:০৯ | আপডেটঃ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:৪৭:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। গত দুই বছরেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো। ২০১৭ সালে ১৩ জুনের পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয় রাঙামাটির সড়কগুলো। কিন্তু গত দুই বছরেও স্থায়ী মেরামত করা হয়নি এসব সড়ক। এ অবস্থায় বর্ষার শুরুর আগেই পাহাড় ধসে ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর মেরামত ও সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। সম্প্রতি মাসিক জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায়  স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও জেলা সড়ক বিভাগকে এ তাগিদ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, জুনের আগেই রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ১২৮টি স্থানে স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আজও তা ছাড় না পাওয়ায় এবারও বর্ষার আগে কাজ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা আর নেই। সড়কগুলোর স্থায়ী মেরামত ও পুনর্নির্মাণে  ২৩০ কোটি টাকার ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। ডিপিপি প্রস্তাবনায় জেলার বিভিন্ন সড়কের ১২৮ পয়েন্টে ৪ হাজার ৭২৫ মিটার পাইলসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব রয়েছে।

ওই বছরের ১৩ জুন সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে রাঙামাটিতে। এতে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর জেলার নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে ফের ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদিকে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো আজও পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়। ফলে আবার সড়ক ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা এবং পাশের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল। দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো গাছের খুঁটি আর মাটি ভরাট করে কেবল সাময়িক সংস্কার কাজেই ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা। অথচ এসব টাকা খরচ করেও ঝুঁকি এড়ানো যায়নি।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, রাঙ্গামাটি শহরে ৩৩, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ৫৬, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে ২৬, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৫ এবং বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে ৩ স্থানসহ ১২৮টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। এসব স্থানে স্থায়ী কাজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পাহাড় ধসের পর এসব সড়কের ১১৩ স্থানে ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় ধসে যাওয়া মূল সড়কের ওপর অস্থায়ীভাবে যান চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি বেইলি সেতু। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এদিকে ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি বিবর্ণ রাঙামাটি। ফলে আবার বর্ষা আসায় জনমনে তৈরি করেছে পাহাড় ধসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা। যে কোনো মুহূর্তে দুর্যোগে রাস্তাঘাটসহ নানা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে এখানকার মানুষ।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুনের পাহাড় ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় মূল সড়কটি ধসে ১০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েক স্থানে ধসে যাওয়া অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে, সড়কের ভাঙনে গাছের খুঁটি দিয়ে পাইলিং দেয়া হয়েছে। বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এসব বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত বর্ষায় পানির প্রবাহে এসব মেরামত ধসে গেছে।



রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, রাঙামাটি বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতির অভিযোগ সড়ক ও জনপথ বিভাগ কারো সাথে সমন্বয় না করে নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করছে, তিনি দ্রুত স্থায়ী রক্ষাপদ কাজ করার দাবি জানান । তিনি আরো বলেন, বর্ষার আগেই সড়কগুলো ঝুঁকিমুক্ত করা দরকার ছিল। যাতায়াতে মারাত্মক ভোগান্তি আর আশঙ্কায় চলতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদেরকে।  প্রতিদিন গড়ে বাসসহ অন্তত কয়েকশ’ দুরপাল্লার যান চলাচল করছে এ সড়ক দিয়ে।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথের বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শংকর চন্দ্র পাল জানান, সড়ক সচল রাখতে তারা বল্লী দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে কাজ করছেন , বড় প্রকল্প অনুমোদন হলে  স্থায়ী রক্ষাপদ  কাজ করা শুরু হবে ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামনুর রশীদ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের  প্রত্যেকটি সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়, সড়ক   জনপথ বিভাগ ও এলজিইডিকে বর্ষা মৌসুমে যেন সড়কগুলো সচল থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।