প্রকাশঃ ২১ মে, ২০১৯ ১১:৪৫:৩৪
| আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:১৮:৪৯
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের পাহাড়ে চলতি মৌসুমে বিভিন্নজাতের লিচুর ভালোর ফলন হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে এখন গাছ ভর্তি লিচু। থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট ছোট পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে এলাকা মুখরিত। কারন পাহাড়ে মাটি ও জলবায়ু লিচু উৎপাদনের জন্য উপযোগী। যার কারনে এবার সুস্বাদু ফল লিচুর ফলন গত বছরের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে।
স্থানীয় বাজার গুলোতে প্রতিদিন প্রচুর লিচু বিক্রি হচ্ছে। বান্দরবানের উৎপাদিত লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় বাজারে একশত লিচু বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়াও চায়না থ্রি জাতের একশত লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩শত টাকা করে। তবে এবছর অনাবৃষ্টি,খরা এবং তীব্র তাপদাহের কারণে পাহাড়ে শত শত বাগানের লিচু ও এর খোসা পুড়ে ফেটে এবং কালসা হয়ে যাচ্ছে ,সেই সঙ্গে পুড়তে যাচ্ছে লিচু চাষিদের স্বপ্নও! মধু মাসের এ সময়টাতে পাহাড়ের লিচু চাষি,বাগানী ও ব্যবসায়ীরা খুশি হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো মাথায় হাত পড়েছে তাদের,যার কারনে হতাশা দেখা দিয়েছে স্থানীয় চাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে।
স্থানীয় লিচু চাষি চাইউগ্য মার্মা ও উপশৈ থুই মার্মা জানান,চলতি মৌসুমে লিচু উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে।। লিচু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি উঠবে কিনা,এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কারণ গত বছর একশত লিচু বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ২শত টাকা হারে। কিন্তু এবছর লিচুর দাম তেমন পাওয়া যাচ্ছেনা। একশত লিচু বিক্রি করতে হচ্ছে ১শ ও ১২০ টাকা দামে। কিন্তু খরচ পড়েছে দ্বিগুন। সেই হিসেবে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছেনা।
চাষীদের মতে, বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজারে বিক্রি হচ্ছে,কিন্তু এ সময়ে লিচু ফেটে চির ধরেছে,খোসায় কালো দাগ পড়ে ফেটে যাচ্ছে,লিচুর আকারও চোট,গাছ থেকে প্রতিদিনই ঝরে পড়ছে লিচু। প্রত্যেকটি বাগানে যে হারে লিচু ফেটে যাচ্ছে আর ঝরে পড়ছে এতে লাভের মুখ দেখার সম্ভবনা নেই।
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের মতে,জেলায় প্রতি বছর লিচুসহ ফলজ বাগান বাড়ছে। চাষীরাও আগ্রহী হয়ে ওঠছেন। এ জেলায় লিচুসহ বিভিণœ প্রজাতির ফলজ বাগান রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলায় ১ হাজার ২শত ৩হেক্টর পাহাড়ি জমিতে বোম্বাই ও চায়না থ্রি এবং দেশিজাতের লিচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২শ ২৮ মেট্টিকটন,তবে মাটি ও পরিবেশ অনুকুলে থাকায় বান্দরবানে প্রতিবছরই লিচুর আবাদ বাড়ছে। লিচু চাষীদের মতে,বাগানে বাগানে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়ার কারনে প্রতি বছর লিচুসহ ফলজ বাগানের প্রতি চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে।
বান্দরবান কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খুরশিদা বেগম জানান,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কৃষি প্রযুক্তি, লিচুর বাগানে সময় মত মরা ডালপালা অপসারণ,সময় মত সার প্রদান, সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় বালাই নাশক স্প্রে ও উন্নত জাতের চারা রোপন,পরিচর্যা করার পরামর্শ প্রদান করার কারনে বান্দরবানে আগের চেয়ে লিচুর ফলন অনেক ভাল হয়েছে।
অপরদিকে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো:ওমর ফারুক বলেন,স্বল্প খরচে পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ে লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় চাষীরা। তবে এবছর লীচুর ফলন ভালো হলেও অনাবৃষ্টি ও খরা এবং অতি উচ্চতাপমাত্রর কারণে বাগানের লিচু’র ঝরে যাচ্ছে। এসময় লীচু গাছের পাতায় স্প্রে এবং গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো:ওমর ফারুক । তিনি আরো বলেন, বান্দরবানের লিচু মানে ভালো। বান্দরবানে দিন দিন লিচু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।