রাঙামাটির লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে

প্রকাশঃ ১২ মে, ২০১৯ ০৬:৩৯:৩০ | আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:৪৮:৩৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি।  রাঙামাটির বাজারে আসতে শুরু করেছে টস টসে রসালো লিচু, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে। কৃষকরা জানিয়েছেন  ফলন ভালো হওয়ায় তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন রাঙামাটির বাইরে মালামাল নিতে পুলিশী হয়রানিসহ বাড়তি ট্যাক্স দিতে হয়।

রাঙামাটির টস টসে রসালো লিচু এখন বাজারে। জেলায় এ বছরও লিচুর উচ্চফলন হয়েছে। পাহাড়ে উৎপাদন হচ্ছে বিদেশি জাতের হাইব্রিড লিচু। এরই মধ্যে বাজারে এসেছে বোম্বে জাতের লিচু। বাজারে আসতে শুরু করেছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচু। বিদেশি জাতের লিচু স্বাদে খুব মিষ্টি। পাহাড়ে চাষাবাদে উপযোগী। চায়না ও বোম্বে জাতের লিচুর চাহিদা বেশি। তাই এসব জাতের লিচু চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। এ ছাড়া তিন জাতের দেশি লিচু আবাদ হচ্ছে পাহাড়ে। ফলন ও উৎপাদনও প্রচুর। বর্তমানে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে পাহাড়ের লিচু বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাইরের বিভিন্ন জেলায়। রাঙামাটি সদরের বালুখালী, জীবতলী, মগবান, বন্দুকভাঙ্গা, সাপছড়ি, কুতুকছড়ি, কাপ্তাইয়ের নাভাঙ্গা, ওয়া¹া, বড়াদম, রাইখালীসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় লিচুর ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। টসটসে রসালো ফরমালিনমুক্ত এই ফল স্থানীয় বাজারে প্রচুর চাহিদা ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এখন এসব ফলমুল স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে জেলার বাইরে। বিভিন্ন উপজেলায় উৎপাদিত আনারস কৃষকরা ইঞ্জিন বোটে করে রাঙামাটি শহরের সমতাঘাট, তবলছড়ি, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং রির্জাভ বাজারে নিয়ে আসছে এবং সেখান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে ট্রাকে করে জেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে চাষীরা বলছেন এবার ভালো ফলন হওয়ায় তারা ন্যায্য মুল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশী দাম দিয়ে কিনলে বাজারে সেই পরিমান দাম পাওয়া যায় না, আর পুলিশী হয়রানিসহ জেলা পরিষদকে ট্যাক্স দিতে হয় বেশী। কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, চলতি বছর রাঙামাটির ১ হাজার ৮৩০  হেক্টর জমিতে হেক্টর প্রতি ৮.৫ মেট্রিক টন  লিচু উৎপাদন মাত্রা ধরা হয়েছে।
চাষিরা জানান, বোম্বে লিচুর আবাদে পাহাড়ে উচ্চফলন পাওয়া যাচ্ছে। উচ্চফলন হওয়ায় পাহাড়ে অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২ ও চায়না-৩ জাতের লিচুর। চায়না-৩ আপেলের মতো গোলাকার। সাইজে বড়। এ জাতের লিচু পাকলে লাল রঙের হয়। স্বাদে মিষ্টি। চায়না-২ জাতের লিচুর আকৃতিও আপেলের মতোই। তবে সাইজে কিছুটা ছোট আর পাকলে জলপাই রঙের মতো থাকে। স্বাদে খুব মিষ্টি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানে লিচুর আমদানি করা হতো রাজশাহী, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে। বর্তমানে পাহাড়ে উৎপাদিত লিচু বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

নানিয়াচর থেকে আসা স্থানীয় কৃষক রবি মোহন চাকমা জানান, এবার তিনি এখনো পর্যন্ত ১লক্ষ টাকার চায়ন ২লিচু বিক্রি করেছেন।  তিনি আশা করছেন আরো এক লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন।

তবে জ্ঞান চাকমা নামে আরেক কৃষক জানান, এবার ফলন বেশী হওয়ায় তারা নায্য দাম পাচ্ছেন না, অনেক সময় পানি দরে লিচু বিক্রি করতে হয়।
চট্টগ্রাম থেকে লিচু ক্রয় করতে আসা ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, আমরা বেশী দাম দিয়ে লিচু কিনতে পারি না, কারনে খরচে পৌষায় না, পথে পথে পুলিশের চাঁদাবাজি, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদের ট্যাক্স দিতে দিতে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।  



রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারন অধিদফরের উপ পরিচালক পবন চাকমা জানিয়েছেন,  গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, তবে চায়না ২ এবং চায়না থ্রি বাজারে পুরোদমে আসতে শুরু করলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম পাবেন। 

বর্তমানে রাঙামাটির লিচুর বাজারে একশ দেশী লিচু বিক্রি ৬০/৭০ টাকা এবং চায়না ২ বিক্রি হচ্ছে ৩০০টাকা করে।

এদিকে পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় কোথাও হিমাগার নেই, সঠিক সময়ে লিচু বিক্রি করতে না পারলে সংরক্ষণের কোনো সুযোগ না থাকায় প্রতি বছর প্রচুর লিচু নষ্ট হয়ে যায়।