রাঙামাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয়তা : ড.আলো রানী আইচ

প্রকাশঃ ৩০ এপ্রিল, ২০১৮ ১২:৩০:৩৪ | আপডেটঃ ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪১:০৪
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলা ভুমি রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাহাড়ের পাদদেশ ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে খেলা করছে অসীম জলরাশি। এশিয়ার সর্ব বৃহৎ হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। এই পাহাড়ি জনপদে তের নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা,ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি তাছাড়া রয়েছে স্থায়ী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠি তাদের ভাষা বাংলা। সব মিলে পাহাড়ি জনপদে কয়েক লক্ষ মানুষের বসবাস। তাদের জীবিকা সন্ধানের প্রধান উপায় কৃষি ফলন, মাছ চাষ, ক্ষেত খামার ও পাহাড়ি কাপড় বিক্রি ইত্যাদি।

এখানে সব জায়গায় শিক্ষার আলো মোটামুটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই অঞ্চলে বেশ কিছু সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী বেসরকারী উচ্চ বিদ্যালয় , সরকারী মহাবিদ্যালয় , সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয়  বেসরকারী আইন কলেজ ও বেসরকারী রাঙামাটি পাবলিক কলেজ। তার মধ্যে শিক্ষা ,সংস্কৃতি,খেলা ধুলার দিক দিয়ে সর্বাগ্রে রয়েছে রাঙামাটি।

২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় রাঙামাটিতে রাঙামাটি পাবলিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে মোটামুটি এই অঞ্চলের শিক্ষা দীক্ষা উজ্জলতর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাঙামাটি কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যা, কমার্সসহ আরো দু’একটি বিষয়ে অনার্স খোলা হয়েছে। জ্ঞানই শক্তি। এই জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তার মধ্যে যে, নাম গুলো আগে আসে ,সেগুলো হচ্ছে রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় ও রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ। এই বিজ্ঞান মনস্কতার যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে রাঙামাটিতে প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনস্বীকার্য। এখন পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোতে শিক্ষানবীশগন নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশকে উন্নত করার জন্য তথা দেশের জনগণের কল্যান করতে হলে জ্ঞান বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যানে লাগাতে হবে। এসময়ে  আমাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আর তা করতে হলে আমাদের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্যই প্রয়োজন । আমাদের এখানে প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলে এখানকার ছেলে মেয়েরা স্বল্প খরচে স্বল্প কষ্টে ঘরে খেয়ে প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়তে পারবে।
নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা দেশের কাজে লাগাতে পারবে। তাতে আমাদের এই অঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনের সহায়ক হবে। দেশের দারিদ্র বিমোচনেও এটা ভুমিকা রাখতে পারবে। যদি মেধা থাকে তাহলে ছাত্র ছাত্রীরা তার পেটে ভাত থাকুক  না থাকুক সে পয়সা ছাড়া সরকারী  বৃত্তি  নিয়ে অনাসায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতে পারবে। তার মনোবাসনা পূরণ করে পৃথিবীকে অভিনব প্রযুক্তি উপহার দিতে পারবে। বিদেশের মাটিতে নিজের দেশের পরিচিতি ঘটাতে পারবে।
রাঙামাটি পার্বত্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয়তা আরো বেশী। এখানকার পাহাড়ি এলাকায় মশার উপদ্রব বেশী। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেশী। বাংলাদেশে জনগণের সংখ্যা অনুপাতে ডাক্তারের সংখ্যা কম। ডাক্তারের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের বেশীর ভাগ জনসাধারণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আমাদের পার্বত্য এলাকায় তিন জেলা মিলে একটি মেডিকেল কলেজ এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমি নিজেও অনেক দিন যাবৎ এর গুরুত্ব অনুধাবন করে আসছি।
আমাদের রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় যদি একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়,যদি ছেলে মেয়ের মেধা থাকে, চোখে স্বপ্ন থাকে,তা হলে অতি নিম্মবিত্তের পরিবারের ছেলে মেয়েরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে। সে ভাল রেজাল্ট করে ডাক্তার হয়ে দেশের জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দুরারোগ্য ব্যাধিকে নির্মূল করতে পারবে। ডাক্তার যদি হন নিবেদিত প্রাণ তাহলে শুধু নিজ এলাকায় নয় ,আতœীয় স্বজন নয়,সারা দেশ হবে উপকৃত।
যদি ডাক্তার আবিস্কারক হন নতুন কোন ওষুধ বা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির আবিস্কারক তাহলে সারা পৃথিবী উপকৃত হবে।
তবে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় সরকার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এতে শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন নয়  দেশের উন্নয়ন একধাপ এগিয়ে যাবে।
                                             

লেখক: ড.আলো রানী আইচ, সাবেক উপাধ্যক্ষ, রাঙামাটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।