সাঙ্গু নদীর চরে দিন দিন বাড়ছে বাদামের আবাদ, বাজারজাতকরণে সরকারি সহায়তা দাবি

প্রকাশঃ ০৮ মার্চ, ২০১৯ ১০:৩১:৫৭ | আপডেটঃ ২২ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:১৭:৫২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান।  বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর চরে দিন দিন বাড়ছে বাদামের চাষ,নদীর এপার-ওপারে বাদাম তোলায় এখন চাষীরা পার করছে ব্যস্ত সময়, কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষীরা ঝুঁকছে বাদাম চাষে।

বান্দরবানের সাংগু নদীর তীরে এখন শুধু বাদাম তোলার আয়োজন। জেলা সদরের বালাঘাটা,ভরাখালী,ক্যামলংসহ সাংগু নদীর তীরে এখন বির্স্তিণ জমিতে হচ্ছে বাদামের আবাদ। প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয় আর জানুয়ারি থেকেই এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে এই বাদাম তোলা শুরু হয়। বাদামের বীজ লাগানোর আগে হাল চাষ দিয়ে সামান্য নরম করে দিতে হয় মাটি। আর পরিস্কার করতে হয় আগাছা। তারপর সারি সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ। মাটি উর্বর তাই দিতে হয় না কোন অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক, তিন মাসের মধ্যেই পরিপূর্ন বাদাম ফলে তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষীরা।

বান্দরবানের বালাঘাটার ভরাখালীর বাদাম চাষী অংক্যনু মার্মা জানান,প্রতিবারের মত এবারে ও আমরা বাদাম চাষ করেছি।বাদাম চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি।
বালাঘাটার ভরাখালীর বাদাম চাষী সেতারা বেগম জানান, নদীর চরে বাদাম ভালো হয়। আমরা প্রতিবছর বাদাম রোপন করি এবং বাদাম ভালো হয় ।
বান্দরবানের বাদামের মান ভালো, প্রতি বছর বান্দরবান থেকে কক্সবাজার, চকরিয়া, টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়ে যায় বান্দরবানের বাদাম। কিন্তুু বাদাম বিক্রি করার জন্য জেলায় কোন বাজারশেড না থাকায় চাষীরা ন্যায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাদাম চাষীদের দাবি জেলা সদরে একটি বাজারশেড করা হোক ,যাতে প্রত্যোক বাদাম চাষি ন্যায্যমুল্যে তাদের বাদাম বিক্রি করতে পারে এবং স্বাছন্দে জীবন নির্বাহ করতে পারে। 

বান্দরবানের বালাঘাটার ভরাখালীর বাদাম চাষী মো:জাফর বলেন, প্রতিবছর বান্দরবানে প্রচুর বাদাম হয় ,কিন্তুু বাদামের ন্যায্যমুল্য আমরা পাচ্ছি না। বাদাম বিক্রির জন্য যদি একটি বাজারশেড নির্মাণ হতো তাহলে বেশ ভালো হত। বাদাম চাষী মো:জাফর আরো বলেন,সরকারিভাবে বান্দরবানে বাদাম বিক্রির জন্য সহযোগিতা করা হলে আমরা ভালো দাম পেতাম।

কৃষি বিভাগ জানায়, গেল বছর বান্দরবানে ৯৭১ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২১ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয় ,আর এবছর ৯ শত ৯৯ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছে। জেলায় এখন ত্রিদানা,মাইজচর, ঝিঙ্গা,বিনা চীনা বাদাম-৬ ও স্থানীয় জাতের বিভিন্ন বাদামের চাষ হচ্ছে আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় জেলায় বাদাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের বীজ,সার,কীটনাশকসহ নানা ধরনের উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। 

বান্দরবানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাদাম চাষ,আর কৃষকেরা বাদামের ন্যায্য মুল্য পেতে কৃষকদের জন্য একটি বাজারশেড তৈরি ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থার প্রতি আগামীতে নজর রাখার আশ্বাস দিলেন কৃষি কর্মকর্তারা। বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো:ওমর ফারুক বলেন, আমরা বাদাম চাষের জন্য চাষীদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে আসছি। সরকারিভাবে বিনামুল্যে বাদাম বীজ,সার ও কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আগামীতে পার্বত্য এলাকায় বাদাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হবে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো:ওমর ফারুক আরো বলেন,বাদাম চাষীদের বাদাম বিক্রিতে সহজলভ্যতা ও ন্যায্য দাম পাওয়া এবং একটি বাজারশেড নির্মাণের জন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি , বাদাম বিক্রির জন্য একটি বাজারশেড করা হলে আশাকরি বাদামচাষীরা উপকৃত হবে।

অল্প সময় ও স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় জেলার নদীর তীরবর্তী এলাকায় দিন দিন বাড়ছে বাদাম চাষ ,তাই কৃষকদের প্রত্যাশা কৃষি বিভাগ থেকে উন্নত বীজ সরবরাহ,বিনামুল্যে সারের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাদাম বিক্রি করে নায্যমুল্য পেতে সহায়তা  করা হলে পার্বত্য এলাকায় বাদামের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় ছাহিদা মিটিয়ে এই বাদাম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে ।