খোলা আকাশের নিচে চলছে সুলতানপুর নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার কার্যক্রম, সহযোগিতা কামনা

প্রকাশঃ ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ০৫:১৫:৪৫ | আপডেটঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:১৫:১২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। সরকারী সহযোগিতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে বান্দরবান সদর উপজেলার ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের উত্তর সুলতানপুরের দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা শিক্ষা কার্যক্রম।

২০১৬ সালে স্থানীয় কয়েকজন জনসাধারণ একত্রিত হয়ে  উত্তর সুলতানপুরের দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি প্রতিষ্টা করেন। যদি ও বা ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চালু হয় নার্সারী শ্রেণি নিয়ে। সময়ের সাথে সাথে গুটি গুটি পা পা করে ৪ বছরে এসে বর্তমানে মাদ্রাসায় ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নার্সারী থেকে ৪র্থ শ্রেণিতে এসে পৌঁছালে ও  নানা প্রকার সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় কোন রকমে চলছে মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রম।

শিক্ষার্থীদের নেই বসার স্থান আর রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষের অভাব। তাই খোলা আকাশের নিচে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে  মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি। অন্যদিকে ৫ জন শিক্ষকের বেতন ৭জন এতিম শিক্ষার্থীর খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি।
উত্তর সুলতানপুরের দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী  মো.কামরুল হাসান বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় বসার কোন বেঞ্চ নাই,নাই কোন ক্লাস রুম, নাই বিদ্যুৎ। ক্লাস রুম না থাকায় খোলা আকাশের নিচে আমাদের ক্লাস করতে হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কলি আক্তার বলেন,খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয় আমাদের। সামনে বৃষ্টির দিন আমরা কি করে ক্লাস করবো ? এখন আমরা মাটিতে বসে ক্লাস করছি। আমাদের মাদ্রাসায় যদি আরো কিছু শ্রেণি কক্ষ থাকতো তাহলে আমাদের ক্লাস করতে এতো সমস্যা হতো না।
শিক্ষার্থী মো: জসিম উদ্দিন বলেন, ক্লাস রুম না থাকার কারণে আমরা মসজিদের ভিতরে ক্লাস করি। আমাদের এখানে ক্লাসরুম আছে ২ টা এর মধ্যে আমারা বসতে পারি না তাই খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। বৃষ্টি আসলে হয়তো আমাদের মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে আমাদের মাদ্রাসার ভবনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

উত্তর সুলতানপুরের দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এরশাদুল আলম বলেন, আমরা অনেক কষ্টে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের বসার জন্য জায়গা দিতে পারি না। আমরা ২০১৬ সালে যখন মাদ্রাসা চালু করি তখন ২০-২৫ শিক্ষার্থী ছিল বর্তমানে নার্সারী থেকে ৪র্থ শ্রেণিতে আমাদের এখানে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের বসার জন্য নেই কোন ভবন বা শ্রেণি কক্ষ। যার ফলে আমাদের বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসার আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করাতে হচ্ছে। সামনে আসছে বর্ষাকাল, আমরা এখন থেকে চিন্তিত যে আমাদের এতো গুলো শিক্ষার্থীদের আমরা কোথায় নিয়ে ক্লাস করাবো। আমরা সরকারের কাছে একটা অনুরোধ করবো যাতে করে আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়াশুনো চালিয়ে নিতে মাদ্রাসায় কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ করা হোক।

দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি মো. হারুন অর রশীদ বলেন,আমরা অনেক কষ্টে এই প্রতিষ্টানটি পরিচালনা করছি। কিন্তু ক্লাস রুমের অভাবে শিক্ষার্থীদের কে ঠিকভাবে বসার ব্যবস্থা করতে পারছি না, যার ফলে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে মাটিতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমি বান্দরবান ৩০০ নং আসন থেকে নির্বাচিত পরপর ৬ষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও সরকারের উর্ধতন কতর্ৃৃপক্ষের নিকট দৃষ্টি আর্কষণ করছি যাতে করে আমাদের এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রাম সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আরো কিছু শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করে।




উত্তর সুলতানপুরের দারুল কোরআন নুরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু বক্কর বলেন, ২০১৬ সালে জুনের ১৬তারিখ ৭ শতক জমির উপর আমরা সুলতানপুরে  শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এলাকার কয়েকজন মানুষ একত্রিত হয়ে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টা করি । গুটি গুটি পাঁ পাঁ করে আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানে নার্সারী থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে যার মধ্যে ১২০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। আবার এই ১২০ জনের মধ্যে ৭ জন এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের থাকা খাওয়া সহ যাবতীয় ব্যয় আমরা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বহন করে থাকি। অতি দূঃখের বিষয় হল আমাদের পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ না থাকার কারণে আমরা আমাদের  শিক্ষার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করতে পারছিনা। শ্রেণি কক্ষ না থাকার কারণে খোলা আকাশের নিচে শ্রেণি কার্যক্রাম চালিয়ে নিতে হচ্ছে। কিšু‘ সামনে আসছে বৃষ্টির দিন। এই সময় আমরা কি করে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিবো ঝুঝে উঠতে পারছিনা। শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষকদের সম্মানী দিতে পারি না,বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যায় কোন রকমে চলছে আমাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা কামনা করছি যাতে আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ভালোভাবে  চালিয়ে নিতে মাদ্রাসায় কয়েকটি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করা হোক এবং সরকারি সহযোগিতার ব্যবন্থা করা হয়।