প্রকাশঃ ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ১১:৩০:৩৬
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:৫৮:২৭
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। দেশের নির্বাচনে জাতীয় সংসদের পর অন্য বড় আয়োজনটির নাম উপজেলা নির্বাচন। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যেমনটা জমজমাট পরিবেশ ছিল, তেমনটা আজ ছিল না। অনেকটা নিরুত্তাপ পরিবেশে ইসি আজ রোববার পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।
সাধারণত বড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে পুরো কমিশন ও ইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। কিন্তু আজ বিকেলে কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৮৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ১০ মার্চ। এ জন্য চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ ফেব্রুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি।
এবার ৪৮১টি উপজেলায় মোট পাঁচ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে সচিব জানান, দ্বিতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ করা হতে পারে পবিত্র রমজানের পর ১৮ জুন।
সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর সংসদের বাইরে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করব নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। যেসব দল অংশ নেবে তারা নিজেদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো জাতির সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবে। নির্বাচনে যত বেশি দল অংশ নেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তত বেশি হবে।’
সংসদ নির্বাচনে বিস্তর ভোট জালিয়াতি হয়েছে দাবি করে বিএনপি বলেছে, উপজেলা নির্বাচনেও একই আদলে ভোট হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’
নির্বাচনে বর্তমানের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো পদে থেকে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। সুতরাং বর্তমানের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করে প্রার্থী হতে হবে।
সংসদ নির্বাচনে উপজেলার পদ থেকে পদত্যাগ করার পরও রিটার্নিং কর্মকর্তারা অনেক প্রার্থীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণের এখতিয়ার স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের। তবে সাধারণত কেউ পদত্যাগের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আবেদন করলে পদত্যাগ কার্যকর হয়ে যায়।
যেসব উপজেলায় নির্বাচন
প্রথম ধাপে যে ৮৭টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে সেগুলো হলো রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় উপজেলার পঞ্চগড় সদর, আটোয়ারী, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া; কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী ও রৌমারী; নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা, নীলফামারী সদর, জলঢাকা, সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা।
ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার সদর উপজেলা, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা, দুর্গাপুর, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, মদন, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা।
সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, দিরাই, জামালগঞ্জ, শাল্লা, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর এবং হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর, চুনারুঘাট, লাখাই, হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, বেলকুচি, চৌহালী, কাজীপুর, রায়গঞ্জ, শাহজাদপুর, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া; জয়পুরহাটের সদর, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল; নাটোরের সদর, বেতাগিপাড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও সিংড়া; রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট ও বাঘা।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। তবে একই বছর অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়ে ১১৬টি উপজেলায় জয় পেয়েছিল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতেছিল ২৬২টি উপজেলায়। সেবার প্রথম দুই ধাপের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিল এবং বিএনপি সরকারি দলের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় জয় পেয়েছিল। তবে তৃতীয় ধাপ থেকে ষষ্ঠ (শেষ ধাপ) ধাপ পর্যন্ত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটে।
কৃতজ্ঞতা: দৈনিক প্রথম আলো