প্রকাশঃ ০৩ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৭:৩২:১১
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:০১:২৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য ৩ জেলার আসনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের দখলে, এতদিন সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচনে জেতার পর এবার কে হবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, এনিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বর্তমান পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও বান্দরবানের সাংসদ বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং রাঙামাটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এর সর্মথক ও শুভাকাঙ্খীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে নিজ এলাকায় সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন। ৩ জানুয়ারী নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যর শপথ গ্রহণের পর ১০ জানুয়ারীর মধ্যে নতুন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ করার কথা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য মন্ত্রনালয়টি একমাত্র পাহাড়ীদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। এছাড়াও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য হতে সম্ভাব্যরা লবিং শুরু করেছে।
১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির কারণে ১৯৯৮ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সৃষ্টি হয়, ১৯৯৮ সনে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রথম পুনাঙ্গ মন্ত্রী হন সে সময় খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্পরঞ্জন চাকমা। ২০০১ সনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুর্ণমন্ত্রীর ক্ষমতা রেখে সে সময় রাঙামাটির সাংসদ মনিস্বপন দেওয়ানকে উপমন্ত্রী করা হয়। ২০০৭ সনে তত্বাধায়ক সরকার সে সময় চাকমা সার্কেল ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়কে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি নিয়োগ করা হয়। ২০০৮ সনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৪ সনে বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিংকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
এবার কে পাচ্ছেন পাহাড়ের এই লোভনীয় পদটি সেটি নিয়ে নেতা কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই।
রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদার চতুর্থবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সনে মহাজোট সরকারের আমলে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এর আগের দফায় উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে দীপংকর তালুকদার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। দুই দফায় আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৪ সনে রাঙামাটি আসনটিতে আঞ্চলিক সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য থাকায় আঞ্চলিক দলের প্রভাবে আওয়ামীলীগ অনেকটা কোনঠাসা থাকলেও আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা ও সুসংগঠিত দীপংকর তালুকদারের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়া উঠা প্রতিরোধ বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে ভারতে প্রশিক্ষন গ্রহণ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিরোধে অংশ নেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা রাঙামাটিবাসী পাহাড়ী বাঙালী ঐক্যের প্রতীক দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের পুর্ণমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৪ সনের পর রাঙামাটিবাসী মন্ত্রিত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। দীপংকর তালুকদারের আমলে সুষম উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে তিনি নেত্রীর কাছে মন্ত্রীসভা গঠনের সময় দাদাকে (দীপংকর তালুকদার) পুর্ণমন্ত্রী করার দাবি জানান।
খাগড়াছড়িতে থেকে দ্বিতীয়বারের মত এবং সবচেয়ে বেশীভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ২০০৮ সনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, ২০১৪ সনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের জন্য লবিং করলেও শেষ সময় এসে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্য্দায় উপজাতীয় শরণার্থী বিষযক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এবার তিন পার্বত্য জেলার সর্বোচ্চ ভোট ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৫০ভোট কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পেয়েছেন।
খাগড়াছড়ি সদর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আজম বলেন, কল্পরঞ্জন চাকমার পর থেকে খাগড়াছড়িবাসী মন্ত্রিত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খাগড়াছড়িবাসীর দাবি পার্বত্য এলাকায় সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী করা হোক।
বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিং এবারসহ টানা ৬বারেরমত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৮ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সন থেকে এখনো অবধি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কম মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ জানান, নতুন বছরে আমরা চাই আগামী দিনে এই পার্বত্য বীরকে (বীর বাহাদুর) মন্ত্রী সভায় পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হোক ,যার ফলে তিনি পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে।
লক্ষীপদ দাশ আরো জানান, বীর বাহাদুর উশৈসিং একজন সৎ নির্ভিক ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে সফল এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে ,সেই সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পার্বত্য এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই বীর বাহাদুরের আমলেই শান্তি ধারা অব্যাহত রয়েছে পার্বত্য এলাকায় আর শান্তি সম্প্রীতিতে পাহাড়ী বাঙ্গালী সবাই সহ অবস্থানে সুন্দরভাবে জীবন ধারণ করে যাচ্ছে।
বান্দরবান পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ জানান,ষষ্ঠবারের মত নির্বাচিত আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী বীর বাহাদুর শুধু বান্দরবানের গর্ব নয় ,তিনি পুরো দেশে আওয়ামীলীগের অহংকার। বীর বাহাদুর উশেসিং দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য পদে রয়েছেন,তিনি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন,তিনি বাফুফের দায়িত্বে ছিলেন,তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এমনকি তিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছে। আমি চাই আগামী সংসদে তাকে পূর্ণ মন্ত্রীর সম্মান দেয়া হবে এবং আমি আরো মনে করি বীর বাহাদুরের এতই বীরত্ব ও গুন রয়েছে যার ফলে সরকার তাকে যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেখ না কেন, তিনি সেই মন্ত্রালয়কে সু সংগঠিত করে দেশ ও জাতির সেবায় আরো অগ্রণী ভুমিকা রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে।
পার্বত্য মন্ত্রী হিসেবে যাকেই দায়িত্ব দেয়া তিনি আবার অপর দুই সংসদ সদস্যর সাথে পরামর্শ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে রদবদল করা হবে।