প্রকাশঃ ২০ নভেম্বর, ২০১৮ ০৬:১০:৪৮
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৫:২৩:২৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আসন্ন ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সংসদের ২৯৯-পার্বত্য আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় জেলা বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী নেতাকর্মীরা। এতদিন তারা নিশ্চিত ছিলেন, দলে নিবেদিত, ত্যাগী ও প্রভাবশালী জনপ্রিয় নেতা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ানকে আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ প্রার্থিতা চেয়ে দীর্ঘদিন আগে দলত্যাগী সাবেক পার্বত্য উপমন্ত্রী মণিস্বপন দেওয়ানের নতুন আবির্ভাব জেলা থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি করেছে শঙ্কা। তারা এবার নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে জয় নিশ্চিত করতে দলের প্রভাবশালী নেতা দীপেন দেওয়ানকে মনোনয়ন দিতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় গণহারে পদত্যাগের হুমকি দেন তারা।
সোমবার দুপুরে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে দাবিটি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তারা আরো বলেন, দীপেন দেওয়ান দলের জন্য অসীম ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছেন। এ জেলায় দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছেন তিনি। জেলা যুগ্ম জজের চাকরি ছেড়ে এসেছেন দলে। দলটিকে তৃণমূল পর্যন্ত সাজিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে উঠিয়ে এনেছেন। আগে এ জেলায় পাহাড়িরা বিএনপিতে আসতে চাইতেন না। দীপেন দেওয়ান দলে আসায় অসংখ্য পাহাড়ি যোগদান করেছেন বিএনপিতে। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার। তাই পাহাড়ি বাঙালি সবার কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। আর মণিস্বপন দেওয়ান দুঃসময়ে দল ছেড়ে এলডিপিতে গিয়েছিলেন, যদিও ২০০১ সালে ভাড়াটে প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালে দলের জন্য, নেতাকর্মীদের জন্য কিছুই করেননি মণিস্বপন। ১২ বছর দলের কোনো খোঁজ-খবরও নেননি। এখন হঠাৎ করে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি বসন্তের কোকিল। এটা বিএনপিকে হটানোর ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে জেতানোর নীলনকশা। দলের কতিপয় সুবিধাবাদী ব্যক্তি এসবে জড়িত। এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না। যদি তাই হয়ে থাকে আমরা দলে থাকব না। এ আসনে দীপেন দেওয়ান ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে জনগণ তাকে প্রত্যাখান করবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিক উদ্দিন আহম্মদ। এ সময় জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জহির আহম্মদ সওদাগর, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুজিত দেওয়ান জাপান, পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক এম আকবর আলী, পরিবার পরিকল্পনা সম্পাদক আমির মো. ছাবের, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মমতাজ মিয়া, সহ-সভাপতি রবিউল আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এম সবুরসহ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জহির আহম্মদ সওদাগর বলেন, এখানে দলের জন্য দীপেন দওয়ান যা করে যাচ্ছেন তাতে তার জনপ্রিয়তা শীর্ষে। বিএনপির এ আসনটির জয় নিশ্চিত হবে, যদি একমাত্র দীপেন দেওয়ানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাকে মনোনয়ন দিলে দলের নেতাকর্মী সবাই কাজ করবে।
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুজিত দেওয়ান জাপান বলেন, দীপেন দেওয়ানকে মনোনয়ন দেয়া না হলে আমি ভোটও দেব না, ভোট কেন্দ্রেও যাব না। মণিস্বপন সুযোগসন্ধানী বসন্তের কোকিল। তিনি ক্ষমতায় থেকেও দলের জন্য কিছুই করেননি। ক্ষমতা শেষে দল ছেড়ে চলে গেছেন। ১২ বছর যাবৎ দলের কোনো খোঁজ নেননি। দীপেন দেওয়ান দলকে শক্তিশালী অবস্থানে তুলে এনেছেন। জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি পাহাড়ি বাঙালি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয়। আমরা তাকে এমপি দেখতে চাই এখানে। আর কাউকে নয়।
দলের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের প্রতি আবেদন জানিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, রাঙামাটি আসনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে হলে মনোনয়ন দিতে হবে দীপেন দেয়ানকে। তিনি যোগ্য, জনপ্রিয় এবং ত্যাগী নেতা। তিনি জেলা যুগ্ম জজ থেকে সরকারি চাকরি ইস্তফা দিয়ে জরুরি অবস্থার সময় এ জেলায় দলের হাল ধরেছেন। তিনি দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, এখনও আছেন। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এ আসনে দীপেন দেওয়ানের জয় শতভাগ নিশ্চিত। কারণ এ জেলার তিনি পাহাড়ি বাঙালির আস্থার প্রতীক। আমরা জানি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সেক্ষেত্রে বিএনপি মূল ¯্রােতের বাইরে যাবে না। যারা দীর্ঘদিন ধরে দলে ছিলেন এবং দলের জন্য আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন, তাদেরকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে রাঙামাটি আসনে দীপেন দেওয়ানকে-ই মনোনয়ন দেয়া হবে।
২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন দীপেন দেওয়ান। পরে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালে দুর্দিনের ক্রান্তিলগ্নে রাঙামাটিতে দলের হাল ধরেন তিনি। সেই সময়ে জেলায় ও প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে তুলে আনতে সক্ষম হন তিনি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনি জটিলতার কারণে রাঙামাটি আসনে দীপেন দেওয়ান প্রার্থী হতে না পারায় তার সহধর্মিনী মৈত্রী চাকমাকে মনোনয়ন দেন, খোদ দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।