অবাধে বালি উত্তোলন কাউখালী-রানীরহাট সড়ক মারাত্নক ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে

প্রকাশঃ ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৮:২৪:০৪ | আপডেটঃ ২০ জানুয়ারী, ২০২৫ ১২:৪৩:৪৪

সিএইচটি টুডে ডট কম,কাউখালী (রাঙামাটি)। ইটের ভাটার জন্য রাস্তার পাড়,নদীর পাড় কেটে মাটি পাচার, ৬ও ইছামতী নদী থেকে দেদারছে বালি উত্তোলনের ফলে কাউখালী উপজেলার সাথে চট্টগ্রাম-রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ স্থাপনকারী কাউখালী-রানীরহাট সড়ক মারাত্বক ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে। রাতদিন সমানতালে আধুনিক এস্কেভেটর দিয়ে নদীর পাড় কাটা এবং মেশিন দিয়ে বালি তোলার ফলে ভারী যান চলাচলের কারনে যে কোন মৃর্হূতে রাস্তা ধসে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রতিদিন নদী থেকে বালি উত্তোলন,রাস্তার পাড়,নদীর পার কেটে মাটি পাচার করছে একটি চক্র। চক্রটি বেশ কিছুদিন ধরে এই মাটিগুলো কেটে ট্রাকে করে প্রকাশ্যে পাচার করছে। দেখার যেন কেউ নেই।


কাউখালী-রানীর হাট সড়কের বহরাতল থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটির সড়কের কাউখালী রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কের দুপাশে মাটি কেটে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা দিন দিন মারাত্বক আকার ধারন করছে। অভিয়োগ রয়েছে এলাকাটি সিংহভাগ পার্শ্ববর্তি রাঙ্গুনীয়া উপজেলা প্রশাসনের আওতায় হলেও কাউখালী উপজেলা প্রশাসন থেকে বার বার মৌখিক এবং লিখিতভাবে জানানো হলেও অদৃশ্য কারনে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় মাটি এবং বালি পাচারকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


ইছামতি নদী থেকে মেশিন দিয়ে বারি উত্তোলনের ফলে কাউখালী উপজেলা সদরের কাউখালী কেন্দ্রীয় কবরস্থান,কাউখালী বাজার কবরস্থান,বগাবিলি উচ্চ বিদ্যালয় এলাকার সন্মূখভাগ সহ আশে পাশের অনেক এলাকা ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে এসব নদীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে বালি উত্তোলন করার জন্য প্রতিবছর নাম মাত্র মূল্যে ইজারা প্রদান করা হলেও প্রতিবছর শতকোটি টাকার ক্ষতির সন্মূখীন হচ্ছেন এলাকায় বসবাসকারীরা। এলাকা নির্দিষ্ট করে বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও প্রভাবশালীরা এসব তোয়াক্কা করছে না।


সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, কাউখালী উপজেলার পাশ্ববর্তি রাঙ্গুনীয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বহরাতল থেকে কাউখালী রাস্তার মাথা এলাকা পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের পাড়, নদীর পাড় কেটে মাটি ইছামতী নদী থেকে বালি উত্তোলন করে পাচার করছে একটি চক্র। এসব মাটির অধিকাংশ যাচ্ছে স্থানীয় আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটাগুলোতে। আধুনিক এস্কেভেটর দিয়ে পাড় কাটায় কাউখালী-রানীরহাট সড়কটিও যে কোন মূর্হতে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুম শুরু হলে সড়ক আরো মারাতœ আকার ধারন করবে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছে।


সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বহরাতল থেকে শুরু হয়ে রাস্তা,নদীর পাড় কাটা, ইছামতি নদী থেকে বালি উত্তোলনের এই মহাযজ্ঞ চলছে। সড়কের পাশে বালির স্তুপ এবং এর পাশেই মাটি কেটে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়েছে। সেখান থেকে খালের দিকে নজর দিলেই দেখা যায় বিশাল এলাকাজুড়ে এস্কেভেটরের সাহায্যে নদীর পাড় কাটার গভীর চিহ্ন। একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে এই মাটিগুলো কেটে ট্রাকে করে প্রকাশ্যে পাচার করছে। এতে রাস্তার পাশে এবং খালের পাড়ে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ভাড়ি এস্কেভেটরের সাহায্যে মাটি কাটতে কাটতে একেবারে সড়কের পাশে চলে এসেছে। এমনকি আশেপাশের নদী পাড়ে সারি সারি লতা আলুসহ নানা ফসলের আবাদ হলেও এই স্থানে মাটি কাটার ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না। গভীর করে মাটি কাটায় ক্ষেতের ফসলসহ ভেঙে পড়ছে খাদের মধ্যে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী মহল ইতিপূর্বে নদীর তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন করতো। এবার এর সাথে সাথে পাড়ের মাটিও কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। বিগত আগষ্ট এর পূর্বে যে চক্র এসব কাজে লিপ্ত ছিলো এখন শুধুমাত্র দায়িত্বপালনকারী চক্র পরিবর্তন হয়েছে। কাজ কিন্ত আগের মতোই চলমান রয়েছে।


কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী আতিকুর রহমান জানান,  কাউখালী-রানীরহাট সড়কের দুপাশের মাটি কাটা,ইছামতি নদী থেকে মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে কাউখালীর বিস্তির্ন এলাকায় ভাঙ্গন,কাউখালী-রানীরহাট সড়ক ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠাসহ এসব বিষয়ে রাঙ্গুনীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিক লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। যেহেতু প্রশাসনিকভাবে ঐসব এলাকা রাঙ্গুনীয়া উপজেলার আওতায় তাই সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


কাউখালী-রানীরহাট সড়কটি রাঙ্গুনীয়া উপজেলার একেবারে শেষ সীমান্ত এলাকায় হলেও কাউখালীর সাথে চট্টগ্রাম এবং রাঙামাটি জেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাঙ্গুনীয়া উপজেলার শেষ সীমান্ত হওয়ায় এই স্থানে প্রশাসনের তদারকির অভাবে দিনের পর দিন এই অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। শুধু এই স্থানেই নয়, ইছামতী নদীর আরও বিভিন্ন পয়েন্টে একইভাবে বালি উত্তোলন করে এবং পাড়ের মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।


এদিকে এই বিষয়ে রাঙ্গুনীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,কাউখালী-রানীরহাট সড়কের পাড়, ইছামতী নদীর পাড়ের মাটি কাটা এবং বালি উত্তোলনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, দ্রুত সময়ে সরজমিনে পরিদর্শন করে এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।