প্রকাশঃ ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৩:১৮:৫৯
| আপডেটঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:০৭:১৬
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে স্থানীয় সরকারের শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আত্নগোপনে চলে যান। এরপর পরিষদগুলোর কার্যক্রম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী দুই একদিনের মধ্যে পরিষদসমুহের অন্তর্বর্তীকালীণ পরিষদ গঠন করা হবে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, প্রায় তিন যুগেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন হ য়নি। পরিষদগুলোতে দলীয় মনোনীত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে কার্যক্রম চালানোয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় মানূষের আস্থা হারাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি অনুয়ায়ী স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে পৃথক ভোটার তালিকা প্রনয়ণ ও নির্বাচন বিধিমালা তৈরী না হওয়ায় এ জটিলতার সৃষ্টি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ে শাসন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষে ১৯৮৯ সালে এরশাদ শাসনামলে পাহাড়ী সম্প্রদায় থেকে একজন চেয়ারম্যান করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট তিন পার্বত্য জেলায়(রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি বান্দরবান) স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য এসব পরিষদের একবাও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর পর প্রায় তিন যুগেও কোন নির্বাচন হয়নি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর ১৯৯৭ সালে ২ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় সরকার পরিষদ পরিবর্তে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নামে পার্বত্য জেলা পরিষদ নামকরণ করে এক জন পাহাড়ি ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান ও ৪জন সদস্য করে অন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠিত হয়। তবে একই বছরে বান্দরবানের এক পাহাড়ি ব্যক্তি কেন পরিষদসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না হাইকোর্টে তার রিট পিটিশন করলে তিন মাসের মধ্যে পরিষদের নির্বাচন অথবা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের রায় হয়। কিন্তু সরকার ওই রায়ের কার্যকারিতার বিরুদ্ধে দফায় দফায় আপীল করে নির্বাচনের অনুষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ায়। ফলে যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সেই সরকারেরই মনোনীত দলীয় লোকজনদের দিয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদের কার্যক্রম চলে আসছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তিন পার্বত্য পরিষদের আইন সংশোধন করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে পূর্নগঠন করে একজন চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্যর আন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ গঠন করে সরকার। এতে আওয়ামীলীগ সরকারের মনোনীত দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কার্যক্রম চলছে। ফলে পরিষদগুলোর স্বচ্ছতা ও দিহিতা না থাকায় জনগণ আস্থা হারিয়েছে। পরিষদগুলোতে অনির্বাচিতদের দিয়ে পরিষদ পরিচালিত হওয়ায় নিয়োগসহ বিভিন্ন উন্নয়ননে দূর্নীতি কয়েকগুন বেড়েছে। উল্লেখ্য, পার্বত্য চুক্তি ও জেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী সরকার বর্তমানে এ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ গুরুত্বপুর্ন ২৮টি দপ্তর ও বিভাগ হস্তান্তরিত করা হয়েছে।
এদিকে, গত ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আতœগোপণে চলে যান। ফলে এসব পরিষদগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আত্নগোপণে থেকে পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৩সেপ্টেম্বর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি ঘোষনা দেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অংসুই প্রু চৌধুরী। তবে তিনি জেলা পরিষদের অফিস আদেশে তার অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হওয়ায় পরিষদের এক সদস্যক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেন। এছাড়া খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আত্নগোপনে গেলেও এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসমুহের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদ পাওয়ার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিরা জোর লবিংও চালাচ্ছেন সমানতালে।
জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, উন্নয়নমুলক কার্যক্রম বাদে দৈনন্দিন ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে জেলা পরিষদগুলোতে অতিদ্রুত চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়া উচিত। তবে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও পার্বত্য জেলার আইন সম্পর্কে জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের ধারনা রয়েছে তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে। তাছাড়া, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে জেলা পরিষদগুলোতে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে এসব পরিষদের গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা থাকবে না এবং পাহাড়ের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, বর্তমানে পরিষদের কাজ এমনিতে সীমিত হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক(উন্নয়নমূলক) কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। তবে পরিষদের নিয়ন্ত্রনাধীন ৩০টি বিভাগের নিয়মিত বেতনভাতাসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো চালু রয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিক কার্যক্রমের যেগুলো রয়েছে সেগুলো রুটিওয়ার্কে চলছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব(যুগ্ন সচিব) কংকন চাকমা বলেন, আগামী দুই একদিনের মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসমুহের অন্তর্বর্তীকালীণ পরিষদগুলো পুর্ণগঠিত হবে। পার্বত্য জেলা পরিষদের আইনানুযায়ী অর্ন্তবর্তীকালীন পরিষদে একজন চেয়ারম্যান ও ১৪ জন সদস্য থাকবেন। এ ১৪ জন সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন অন্তর্ভূক্ত থাকবেন।