ইলিশের জিন আবিস্কারক বিজ্ঞানী ড. মংসানু মারমাকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত খাগড়াছড়িবাসী

প্রকাশঃ ০৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০৬:৫০:৩৫ | আপডেটঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:২৬:১৪
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম মহালছড়ির সিঙ্গিনালার সন্তান বিজ্ঞানী ড. মংসানু মারমাকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত হয়ে পড়েছেন খাগড়াছড়িবাসী। কারণ, এরিমধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের জিন আবিস্কার করে বিশ^ব্যাপি খ্যাতি অর্জন করেছেন এই কীর্তিমান।

ড. মং সানু এখন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরে বাস করছেন। সেখানে নতুন প্রজন্মের ডিএনএ বিন্যাস প্রযুক্তির একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিংগিনালা গ্রামে বড় হয়েছেন। বাবার নাম মং চাই উরি মারমা ও মায়ের নাম আবাইমা চৌধুরী। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯৯৭ সালে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় ও জৈব রসায়ন বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ বিভাগে তিনি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। এরপর তিনি জাপানে বৃত্তি নিয়ে আরেকটি মাস্টার্স ডিগ্রি নেন এবং ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় পিএইচডি শুরু করেন। ২০০৫ সালে তাঁর পিএইচডি শেষ হয়। পরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রজন্মের জিন উদ্ভাবন কাজে যুক্ত হন। ২০০৭ সালে নতুন প্রজন্মের ডিএনএ বিন্যাস প্রযুক্তির একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানে এখন তিনি জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও নিউক্লিওটাইড রসায়ন বিভাগের প্রধান। স্ত্রী মাফুই চিং রোয়াজা এবং ১১ বছর বয়সী উমা মারমা ও সাত বছর বয়সী মাশুই নুই মারমা নামে দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে বোস্টনে তিনি বসবাস করছেন।

এদিকে প্রচারবিমুখ এই ব্যক্তিত্ব দীর্ঘ চার বছর অত্যন্ত সঙ্গোপনে নিজের জন্মস্থানে আসার পর থেকেই মহালছড়ির সিঙ্গিনালা গ্রামে যেনো মানুষের বান ডেকেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, নানা সংগঠন তাঁকে একনজর দেখা এবং নানা আয়োজনে তাঁকে সংবর্ধিত করার জন্য ভীড় করতে থাকেন।

বিদায় বেলায় সোমবার সকালে মারমা উন্নয়ন সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে ড. মংসানু মারমাকে একটি সংবর্ধনা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের আলোচনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে হলে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এসময় তিনি মারমাদের উদ্যেশ্যে বলেন শিক্ষা ও ভূমি রক্ষা করতে না পারলে একদিন মারমা সংস্কৃতি টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়ার শংকা প্রকাশ করেন তিনি বলেন, আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে মারমা জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষ হিসেবে জাতি নির্মাণের জন্য যা রয়েছে তা মানুষের জন্য অনেক। মানুষ যদি এই পৃথিবী নিয়ে ভাবে তাহলে অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু এদেশের মানুষ পৃথিবীকে নিয়ে এখনো ভালো করে ভাবতে শুরু করেনি। তিনি আমেরিকায় গবেষণা করলেও বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক ভাবেন। তিনি ইলিশ নিয়ে যেভাবে জিন আবিষ্কার করেছেন ঠিক তেমনি আরো অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, আগের সময়ে আমাদের মারমা জাতির লোকজন এতো শিক্ষিত ছিল না। এখন অনেক হয়েছে। জাতিকে এগিয়ে নিতে মারমা সংসদের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভায় মারমা উন্নয়ন সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ক্যজরী মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মারমা উন্নয়ন কমিটি সদর শাখার সহ সভাপতি আথইঞো মারমা, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, সহ সম্পাদক বাঁশরি মারমা, সংস্কৃতি ও মানব কল্যাণ সম্পাদক বিহানু চৌধুরীসহ খাগড়াছড়ি মারমা উন্নয়ন সংসদের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞানী মংসানু চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার দুর্গম দোছড়ি পাহাড়ি পল্লীতে দরিদ্র শিশুদের জন্য ‘বিশাখা স্কুল’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। গত ১৩ বছর ধরে কোন প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই এটি তিনি পরিচালনা করছেন। সোমবার সড়কপথে তিনি এই বিদ্যালয় পরিদর্শনেও যান।