প্রকাশঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ০৬:১৭:০৩
| আপডেটঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৮:২৫:৩৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। এক বছরের জন্য গঠিত রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হলো ৯ বছরে এসে। বার্ষিক সম্মেলনের দিন সকাল ১০টায় নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও উদ্বোধন হয় পৌনে ১টায়। তীব্র গরমে জেলার দশ উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরাসহ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে হাঁসফাঁস দেখা গেছে। ছাত্রলীগের সম্মেলনে ‘বিশৃঙ্খলার’ কারণে বিরক্ত হতে দেখা গেছে অতিথিদেরও। অনুষ্ঠানজুড়েই চেহারায় ছিল বিরক্তিভাব।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে সম্মেলনের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিতি হননি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতাসহ অন্যরা। মূলত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের অনুপস্থিতির কারণেই উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু করা যায়নি বলে জানা গেছে। এতে করে সকাল থেকেই দীর্ঘসময় গরমে ত্রাহি দশা বিভিন্ন উপজেলা আগত নেতাকর্মীদের। অবশ্য এই বিশৃঙ্খলার জন্য ‘দুঃখপ্রকাশ’ও করেছেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। তবে রোববার রাতে রাঙামাটিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা এসে পৌঁছালেও অনুষ্ঠানস্থলে বিলম্বে আসা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে বেলা পৌনে ১টায় শুরু হওয়া জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলার সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রæ চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই তিন নেতাকেই অনুষ্ঠান বিরক্তিভাব নিয়ে বসতে থাকতে দেখা গেছে। এতে উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদস্থ নেতারা।
সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সময়ের পরে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণের উচ্ছ¡াস আমরা লক্ষ্য করেছি। সম্মেলন ঘিরে আমাদের কিছু লক্ষ্য ও গোল রয়েছে। ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-জবাবদিহিতা রয়েছে। দূর-দুরান্ত থেকে সাত-আটটা ঘন্টা পরিশ্রম করে আজকে রাঙামাটি জেলা শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে যারা এসেছে; দুর্গম অঞ্চল থেকে গ্রীষ্মের তাপদাহ উপেক্ষা করে তীব্র গরমের মধ্য কষ্ট করে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের প্রতি আমরা স্যালুট জানাই। ছাত্রলীগের কর্মীরা কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসেনি। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গড়া ও ব্যাংক একাউন্ট বিক্রির জন্য ছাত্রলীগ রাজনীতি করে না। আমরা রাজনীতি করি সমাজ বদলের জন্য, দিন বদলের জন্য।’
এদিকে, বিলম্বে সম্মেলন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঘটনায় নিজেদের বক্তব্যে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছেন রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন।
কাদের ‘টিপ্পনি’ দিলেন দীপংকর?সম্মেলনের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, ‘সভাপতি-সম্পাদক হতে ৭২ জন সিভি দিয়েছেন। দুজন ছাড়া ৭০ জনই বাদ পড়বেন। বাদ পড়াদের সভাপতি-সম্পাদককে সহযোগিতা করতে হবে। রাঙামাটি ছাত্রলীগের সম্মেলন ৯ বছরের মধ্যে না হওয়া প্রচুর ট্রাফিক যানজট লেগে গেছে। উদীয়মান ছাত্ররাও পিতা-মাতা হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের প্রার্থী হবে ৩২-৩৩ বছর বয়সে; এমনটা যেন না হয়। সাদ্দাম-ইনানের জোড়াজুড়ির জন্যই এই সম্মেলনটা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা বলছিলে দাদা সম্মেলনটা পরে করলে হয় না। আমি আশা করব, প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর রেগুলারলি যেন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এই গরমের প্রচÐ তাপদাহে যারা সম্মেলনে এসেছে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’
৯ বছরে যা ঘটলো:২০১৫ সালের ২ জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। পরদিন ৩ জুন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আংশিক কমিটিতে সাইফুল আলম রাশেদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, এম এন কাউসার রুমিকে সহসভাপতি, রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মো. সালাউদ্দিন টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
ওই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বছরের জন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও কমিটির ঘোষণার আড়াই বছর ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি ১৫১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের দেড় বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এর মাঝে সভাপতি-সম্পাদককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে একটি ‘পাল্টা কমিটি’ও করেছিল একাংশের নেতারা। তবে দীর্ঘ ৯ বছরের মাথায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ বার্ষিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা ছাত্রলীগ।