কমিটি ঘোষণা ছাড়ায় শেষ হলো খাগড়াছড়ি ছাত্রলীগের সম্মেলন

প্রকাশঃ ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০৯:০১:০২ | আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৩৩:৩৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলন। একইদিন জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের খুঁজে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ারও কথা থাকলেও কমিটি ঘোষণা ছাড়ায় শেষ হয়েছে।  

শনিবার(২৭ এপ্রিল) বেলা ১২ টার দিকে জেলা শহরের পৌর টাউন হল প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌর শাখা থেকে সম্মেলনস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হল মিলনায়তনে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম পর্বের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ির সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

সম্মেলনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

উদ্বোধকের বক্তব্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের প্রত্যেক সদস্যকে স্মার্ট কর্মী হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী সৈনিক হতে শিক্ষা, দক্ষতা ও চারিত্রিকগত ভাবে স্মার্ট মানুষ হওয়ার আহŸান জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগ যেন ভীতির কারণ না হয় সে ভাবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনার নির্দেশ দেন। ছাত্রলীগের কোন বিভাজন থাকবে না, কোন দলাদলি থাকবে না। ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীর আস্থার ঠিকানা রূপান্তরের চ্যালেঞ্জে কাজ করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, সংগঠনের ভেতরে স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে অতীতে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে ষড়যন্ত্রকারীদের এড়িয়ে চলতে হবে। ছাত্রলীগ হচ্ছে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ার সংগঠন। ছাত্রলীগের আদর্শিক ধারার মধ্যে থেকে দেশ ও দশের জন্য কাজ করে যাবে আগামীর ছাত্রলীগ নেতৃত্ব এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রথম পর্বের সম্মেলন শেষে দ্বিতীয় পর্বের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহŸায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে মধ্যহ্নভোজের পর দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে সম্মেলনের বিরতি দেয়া হয়। কিন্তু বিরতির পর আর কাউন্সিল ও কমিটির নাম ঘোষণা ছাড়ায় শেষ হয় খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের জেলা বার্ষিক সম্মেলন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কাউন্সিলর ও সমর্থকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বলেন, সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল সেটি দিন শেষে ম্লান হয়ে গেছে কমিটি ঘোষণা না হওয়ায়। যারা যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন চেয়ে জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছি তাদেরও যাচাই বাছাই করা হয়নি। ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূলের নেতৃত্বের রায় গ্রহণের যে সুযোগ ছিল সেটি দিন শেষে কেন হলো না সেটি জানি না।

খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহŸায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরা বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মতে আমরা সম্মেলন আয়োজন করেছি এবং সফল ভাবে সম্পন্ন করেছি। সকল কাউন্সিলররা খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপির সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে ঘোষণা দেয়ায় দ্বিতীয় পর্বে কোন কাউন্সিল হয়নি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দিবেন বলে জানিয়েছেন।

এ দিকে, দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিল না হওয়ার পেছনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে আরেকটি কারণ হিসেবে দেখছেন সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রলীগ কর্মী এবং আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। ২০১৫ সালে সবশেষ হওয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের পরপর খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে গ্রুপিংয়ে লিপ্ত হয় তৎকালীন সভাপতি টিকো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজ। যার জের পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়ে জেলার সব উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে। পূর্ববর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝামেলা এড়াতে এ বার এমন সিদ্ধান্ত হয়েছেও বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কোন সূত্র কথা বলতে রাজি হননি।