সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। নামে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও ১০ শয্যার এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল পাশের আরও দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। নলখাগড়া ও টিন শেড জরাজীর্ণ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজে যেন ক্লান্ত। ১০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীঘিনালা ছাড়াও রাঙ্গামাটির লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে রোগী ও স্বজনরা যেমন ভোগান্তিতে তেমন সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম পরিস্থিতিতে পড়তে হয় চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, ২০২০ সালে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
৫০ শয্যা বিশিষ্ট তিন তলা ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পান মেঘ কনস্ট্রাকশন
নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কার্যাদশে পাওয়ার পর কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
করোনা মহামারীর শুরুর পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কাজ শুরু হলেও নির্মাণ সামগ্রীর
মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে কাজ কয়েক দফায় বন্ধ হয়ে যায়। কার্যাদেশে ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে
কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছরেও তাই হয়নি। কয়েক দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কবে
শেষ হবে তার নিশ্চিত কোন তথ্য বলতে পারছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল
অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দীর্ঘ চার বছরেও কাজ শেষ করতে না পারার পেছনে দিচ্ছেন
নানা অজুহাত।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেঘ কনস্ট্রাকশনের তত্ত্বাবধায়ক
মেহেদী হাসান জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। কাজ শুরুর পর কার্যাদেশে
উল্লেখিত নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য দরপত্রের চুক্তিমূল্যের চেয়ে অনেকাংশ বেড়ে যায়। এ
ছাড়া আরও বেশ কিছু কারণে নির্মাণ কাজ ধীরগতি হয়ে পড়ে। ফলে কার্যাদেশে উল্লেখিত সময়ের
মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। চলতি অর্থ বছরের মধ্যে কাজ শেষের আশা করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী
হেলাল উদ্দিন জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের কাজ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি শেষ করতে
পারেনি। কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়ানোর পর চলতি অর্থবছরের ৩১ মে শেষ হবে এ কাজের মেয়াদ। এ
সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, জনবহুল এ উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য সেবার এ
প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের কষ্টের যেন কমতি নেই।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্সের সংকটের পাশাপাশি আছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর
সংকট। নেই আধুনিক কোন রোগ নির্ণয় ব্যবস্থাও।
চিকিৎসা নিতে আসা মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, ‘জ্বর-কাশি
ছাড়া কোনো চিকিৎসাই এখানে হয় না। ফলে চিকিৎসা নিতে আমাদের জেলা শহরে যেতে হয়, যেখানে
যাতায়াতে ভোগান্তি আর প্রচুর অর্থ খরচ হয়।’
আল- আমিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ‘৫ বছর ধরে
দেখছি নির্মাণ কাজ চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এমন কাজে ধীরগতি হলেও অবহেলার দায়ে কারও বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার জানান, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না। ১০ শয্যার জনবল ও সুবিধা নিয়ে এত বড় উপজেলা ও পাশাপাশি অন্য উপজেলার রোগীর চাপ সামাল দেয়া কঠিন। তারও আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।