সাকিব আলম মামুন, সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)।পাহাড়ি অঞ্চলে যখন বাড়ছে তামাকের আগ্রাসন, দিনের পর দিন কমছে খাদ্য-শস্য উৎপাদন তখন সূর্যমুখীর চাষ নতুন সম্ভাবনা হিসেবে হাতছানি দিচ্ছে এ জনপদে। এক সময়কার প্রাচুর্যতায় ভরা পাহাড়ি জনপদের কৃষকরা অধিক মুনাফার লোভে তামাকচাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা ও প্রচারণার কারণে অনেক কৃষক তামাক চাষ থেকে মুখ ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে রাঙামাটির লংগদুতে বেড়েছে ইক্ষু, কাজু, কফিসহ নানা অর্থকারী ফসলের চাষাবাদ।
ফলন ভালো ও লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখীফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়ের কৃষক।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদে পরীক্ষামূলক চাষের পর এখন অনেকে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। আর সূর্যমুখীর আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা সহ নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদ লংগদুর কৃষিজমিতে নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি এখন জায়গা দখল করে নিয়েছে সূর্যমূখী ফুল। বিস্তৃর্ণ জমিতে আবাদ হচ্ছে এই ফসল।
জানা গেছে, মাত্র ১০০ দিনে ঘরে তোলা যায় সূর্যমূখীর বীজ। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভালো ও তুলনামূলক লাভও বেশি হয়। ফলে লংগদুর কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
নতুন ফসল উৎপাদনে চাষিদের উৎসাহিত করতে নিজেই বিকল্প শস্য আবাদে মনোনিবেশ করেছেন লংগদুর কৃষক রফিকুল ইসলাম। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী এলাকায় নিজের বসতবাড়ির পাশেই করেছেন সূর্যমুখীর বাগান। প্রায় ১৮ শতক জমিতে করেছেন তার এ সূর্যমুখী চাষ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই পতিত জমিতে সূর্যমুখীর বাগান পরিচর্যা করছেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। বাগানজুড়ে হলদে সূর্যমুখীর হাসি। প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে। পুরো বাগান জুড়েই হলুদ-সবুজের সমারোহ। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সূর্যমুখীর বীজ সংগ্রহ করেই গড়ে তোলেন সূর্যমুখীর বাগান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখীর চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। সেই থেকেই সূর্যমুখী বাগান করার পরিকল্পনা এবং বীজ সংগ্রহ করা। তিন মাস বয়সী বাগানের প্রতিটি গাছেই ফুল এসেছে। ফুলের দানাগুলো পরিপক্ক হলেই গাছগুলো শুকিয়ে যাবে। এরপর দানা সংগ্রহ করে তা ঘানিতে ভাঙিয়ে সংগ্রহ করা হবে তেল।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওশন জাহান বিপাশা বলেন, দিনদিন উপজেলায় সূর্যমূখীর আবাদ বাড়ছে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রণোদনা ও নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সয়াবিন তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে সূর্যমূখী ফুলসহ তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, তেলের ঘাটতি পূরণে সূর্যমুখী বীজের উৎপাদন বাড়াতে এবার লংগদুতে জেলা পরিষদ ও উপজেলা কৃষি বিভাগের যৌথ প্রণোদনায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে শতাধিক কৃষককে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
তিনি আরও জানান, প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হেক্টর, যা অর্জিত হয়েছে ২০ হেক্টর। গতবারের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি হয়েছে চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখী দেশে চাষ উপযোগী। তবে পাহাড়ে এর আবাদ তেমন হয় না। পাহাড়ের সমতল ভূমি সূর্যমুখী চাষের জন্য বেশ সম্ভাবনাময়। তবে স্থানীয়ভাবে এর বাজার ব্যবস্থাপনা থাকলে কৃষক এটি উৎপাদন করে লাভবান হতে পারবে।