বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ কর্মী খুন, তিন মাসে ৯ হত্যাকান্ড

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে নিপন চাকমা (৩৫) নামে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) এক কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বোধিপুর এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন নিপন চাকমা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে করে এসে ইউপিডিএফ কর্মী নিপুন চাকমাকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নিপন চাকমা বঙ্গলতলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বালুখালী গ্রামের কমলা কান্তি চাকমার ছেলে।

হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জ্ঞান জ্যোতি চাকমা জানান, ‘বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শনিবার রাতে কনসার্টের অনুষ্ঠান চলাকালে একজনকে গুলি করে মারা হয়েছে।’ বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ‘ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরের বটতলা এলাকা থেকে রোববার দুপুরে নিহত ইউপিডিএফ কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’

স্থানীয় একটি রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকান্ডের ঘটনার পরই বটতলা এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে গুলিবিদ্ধ মরদেহটি নিয়ে রাখা হয়। পরে সেখান থেকেই দুপুরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিপন চাকমা ইউপিডিএফের সামরিক শাখার ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতা’ ছিলেন।

হত্যাকান্ডের ১৪ ঘন্টা পর ইউপিডিএফের বিবৃতি:
এদিকে, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলীতে সংগঠনের কর্মী নিপন চাকমা খুনের ১৪ ঘন্টা পর গণমাধ্যমে বিবৃতিতে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। রোববার (২৫ ফেব্রæয়ারি) দুপুর সাড়ে ১১টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘ন্যাক্কারজনক’ মন্তব্য করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউপিডিএফ।

ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক অক্ষয় চাকমা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে গতকাল শনিবার রাতে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীরা নিপন চাকমা (৩৫) নামে ইউপিডিএফের এক সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় একদল সশস্ত্র ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী মোটর সাইকেলযোগে বঙ্গলতলীতে এসে ইউপিডিএফ সদস্য নিপন চাকমার ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান।’

ইউপিডিএফ নেতা অক্ষয় চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীরা (নব্য মুখোশ) একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত করলেও খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’ বিবৃতিতে তিনি ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ‘ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস’ বন্ধের দাবি জানান।

খুনের ঘটনায় ‘ঠ্যাঙাড়ে (নব্য মুখোশ) বাহিনী’ উল্লেখ করলেও মূলত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)কে খুনের ঘটনায় দায়ী করেছে করেছে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। তবে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা অভিযোগের পেছনে ‘ইউপিডিএফের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ আছে বলে মন্তব্য করেছে।

ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘ইউপিডিএফের এটা মনগড়া অভিযোগ করছে। এই মনগড়া অভিযোগের পেছনে তাদের রাজনৈদিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ওই এলাকায় আমাদের পার্টির কার্যক্রমও নেই।’

৩ মাসের মাথায় ইউপিডিএফের ৯ জন খুন:

এর আগে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় গুলি করে ইউপিডিএফের চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন ত্রিপুরা।

পানছড়ির চার খুনের দেড় মাসের মাথায় গত ২৪ জানুয়ারি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় আরও দুজনকে হত্যা করা হয়। তখন মারা যান ইউপিডিএফ সদস্য রবি কুমার চাকমা ও শান্ত চাকমা ওরফে বিমল। ৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় আরও দুজন খুন হলেন। নিহত হলেন ইউপিডিএফ সদস্য দীপায়ন চাকমা ও আশুক্য চাকমা ওরফে আশীষ (৪৫)। সর্বশেষ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে একই উপজেলায় ঘাতকের বুলেটে খুন হলেন ইউপিডিএফের আরেক কর্মী। এ নিয়ে তিন মাসের মধ্যেই খাগড়াছড়িতে ৬ ও রাঙামাটিতে ৩ কর্মীসহ ইউপিডিএফের ৯ নেতাকর্মী প্রাণ হারালেন ঘাতকের বুলেটে।