নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলযোগ,বিপর্যস্ত শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশঃ ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ০৬:১৪:১২ | আপডেটঃ ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৪৮:৩৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গেল কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির বিকট শব্দ আর কখনো কখনো তাদের দু পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে আরপিজি,মর্টারশেল আর গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখন্ডে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।

এদিকে নিরাপত্তার কারণে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
বন্ধ বিদ্যালয়গুলো হলো ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশফাঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রæ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়গুলো কয়েকদিন যাবৎ বন্ধ থাকায় আর সীমান্তজুড়ে প্রতিদিনই আতংক বাড়ার কারণে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোঁহাতে হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মোট ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে আর এর মধ্যে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুল মান্নান জানান, নিরাপত্তার কারণে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নাইক্ষ্যংছড়ির ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে তবে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেগুলোতে পুনরায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষা কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ রাখছি আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে সীমান্তে গোলযোগপূর্ণ সময়ের মধ্যেই নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র ঘোষনা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রটিতে পরীক্ষা নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, আগামী ১৫ফেব্রুয়ারী সারাদেশেরমত বান্দরবানে ও শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা আর এবারের পরীক্ষায় বান্দরবানের ৭উপজেলায় ১৫টি কেন্দ্র রয়েছে আর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ২শত ২৫ জন। আর নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫শত।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো.রাশেদ বলেন, আমাদের বাড়ী এবং বিদ্যালয় সীমান্ত এলাকার একদম কাছে, গত কয়েকদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির বিকট শব্দ আর গোলার আওয়াজে আমাদের পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটছে আর আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক খাইরুল বশর বলেন, সীমান্তের ওপারে কয়েকদিনের গোলাগুলিতে আমাদের সবার মনে নতুন নতুন আতংক সৃষ্টি হচ্ছে,কখন কি হয়। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা রেখেছি যদি পরিস্থিতি আবারোও উত্তপ্ত হয় তাহলে কেন্দ্র পরিবর্তন হবে।
বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে উত্তোজনা বেড়েই চলেছে। এদিকে সীমান্তে গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় পরপরই আমরা সর্তক রয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের শ্রেণী কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারী এসএসসি পরীক্ষার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সীমান্তে উত্তোজনা বৃদ্ধি পেলে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় সার্বিক প্রস্তুুতি প্রশাসনের রয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী আরো বলেন, বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় গিয়ে তাদের লেখাপড়ার খবরাখবর নিচ্ছি এবং তাদের শিক্ষার উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বিজিবির টহল আরো জোরদার করা হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বিনষ্ট না হয় সেজন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।