প্রকাশঃ ১০ জানুয়ারী, ২০২৪ ০৬:৩২:১৫
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:১৩:৩৪
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য ৩ জেলার আসনই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের দখলে, এতদিন সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নির্বাচনে জেতার পর এবার কে হবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, এনিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। বর্তমান পার্বত্যমন্ত্রী ও বান্দরবানের সাংসদ বীর বাহাদুর, খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এবং রাঙামাটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এর সর্মথক ও শুভাকাঙ্খীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে নিজ এলাকায় সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছেন। বুধবার ১০ জানুয়ানি নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যর শপথ গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারী নতুন মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ করার কথা।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য মন্ত্রনালয়টি একমাত্র পাহাড়ীদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। এছাড়াও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য হতে সম্ভাব্যরা লবিং শুরু করেছে।
১৯৯৭ সনের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির কারণে ১৯৯৮ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সৃষ্টি হয়, ১৯৯৮ সনে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রথম পুনাঙ্গ মন্ত্রী হন সে সময় খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত কল্পরঞ্জন চাকমা। ২০০১ সনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুর্ণমন্ত্রীর ক্ষমতা রেখে সে সময় রাঙামাটির সাংসদ মনিস্বপন দেওয়ানকে উপমন্ত্রী করা হয়। ২০০৭ সনে তত্বাধায়ক সরকার সে সময় চাকমা সার্কেল ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়কে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি নিয়োগ করা হয়। ২০০৮ সনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৪ সনে বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিংকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৯ সনে বীর বাহাদুরকে পুর্ণমন্ত্রী করা হয়।
এবার কে পাচ্ছেন পাহাড়ের এই লোভনীয় পদটি সেটি নিয়ে নেতা কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি নেই।
রাঙামাটি আসনে দীপংকর তালুকদার পঞ্চমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সনে মহাজোট সরকারের আমলে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এর আগের দফায় উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে দীপংকর তালুকদার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। দুই দফায় আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৪ সনে রাঙামাটি আসনটিতে আঞ্চলিক সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য থাকায় আঞ্চলিক দলের প্রভাবে আওয়ামীলীগ অনেকটা কোনঠাসা থাকলেও আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা ও সুসংগঠিত দীপংকর তালুকদারের ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়া উঠা প্রতিরোধ বাহিনীর অন্যতম সদস্য হিসেবে ভারতে প্রশিক্ষন গ্রহণ করে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিরোধে অংশ নেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলেন, আমরা রাঙামাটিবাসী পাহাড়ী বাঙালী ঐক্যের প্রতীক দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের পুর্ণমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৪ সনের পর রাঙামাটিবাসী মন্ত্রিত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। দীপংকর তালুকদারের আমলে সুষম উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে তিনি নেত্রীর কাছে মন্ত্রীসভা গঠনের সময় দাদাকে (দীপংকর তালুকদার) পুর্ণমন্ত্রী করার দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় এবার সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন দীপংকর তালুকদার।
খাগড়াছড়িতে থেকে তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ২০০৮ সনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, ২০১৪ সনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের জন্য লবিং করলেও শেষ সময় এসে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমযার্দায় উপজাতীয় শরণার্থী বিষযক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি পর পর দুবার টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল আজম বলেন, কল্পরঞ্জন চাকমার পর থেকে খাগড়াছড়িবাসী মন্ত্রিত্ব পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খাগড়াছড়িবাসীর দাবি তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিও তাই কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী করা হোক। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করেছেন। তাই খাগড়াছড়িবাসীসহ আমাদের দাবি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মন্ত্রী করা হোক।
বান্দরবান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশেসিং এবারসহ টানা ৭মবারেরমত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০৮ সনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪ সনে প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৮ সন থেকে থেকে এখনো অবধি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের পুর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।
বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষীপদ দাশ জানান, নতুন বছরে আমরা চাই আগামী দিনে এই পার্বত্য বীরকে (বীর বাহাদুর) মন্ত্রী সভায় তৃতীয়বারের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হোক ,যার ফলে তিনি পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে।
লক্ষীপদ দাশ আরো জানান, বীর বাহাদুর উশৈসিং একজন সৎ নির্ভিক ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে সফল এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে ,সেই সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পার্বত্য এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই বীর বাহাদুরের আমলেই শান্তি ধারা অব্যাহত রয়েছে পার্বত্য এলাকায় আর শান্তি সম্প্রীতিতে পাহাড়ী বাঙ্গালী সবাই সহ অবস্থানে সুন্দরভাবে জীবন ধারণ করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তিনি তিন পার্বত্য জেলায় সুষম উন্নয়ন করেছেন।
পার্বত্যমন্ত্রী হিসেবে যাকেই দায়িত্ব দেয়া তিনি আবার অপর দুই সংসদ সদস্যর সাথে পরামর্শ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে রদবদল করা হবে।