ইউপিডিএফের রজতজয়ন্তী পালন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের আহ্বান

প্রকাশঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৩:৪৩:১৩ | আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ০৫:৪১:৩৪

সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। আগামী ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং শিশুকিশোর র‌্যালি, আলোচনা সভা, দলীয় পতাকা উত্তোলন, নেতাকর্মীসমর্থকদের স্মরণ, মতবিনিময় ও চা চক্রসহ নানা আয়োজনে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর রজতজয়ন্তী (২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী) পালিত হয়েছে।


আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় বিশাল এক শিশু রালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহস্রাধিক শিশু, কিশোরকিশোরী অংশগ্রহণ করেন। র‌্যালিটি পানছড়ি সদরের পুরোনা বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে পানছড়ি কলেজ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলা সদর, মানিকছড়ি উপজেলা সদর, রাঙামাটির কুদুকছড়ি, নানাচরে শিশু র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিশু র‌্যালি ছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি; রাঙামাটি জেলার কুদুকছড়ি, কাউখালী, বাঘাইছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মতবিনিময়চা চক্র ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।


সভাপতির বার্তা:

২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভাপতি প্রসিত খীসা পার্টির কর্মী, সমর্থক ও জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বার্তায় বলেন, জেলজুলুম, মামলাহুলিয়া, ষড়যন্ত্রঅপপ্রচার, গুপ্ত হামলাহত্যা এককথায় অবর্ণনীয় দমনপীড়ন মোকাবিলা করে ইউপিডিএফ ২৫ বছর ধরে অবিচলভাবে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই সংগ্রাম জারি রেখেছে। এ সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের বেশ কজন সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল সংগঠকনেতাকর্মীসহ ৩৫৬ জন আত্মবলি দিয়েছেন।


পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ইউপিডিএফ বরদাস্ত করবে না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অতীতে বিভিন্ন সময়ে দালাল (দুলো) বেঈমান আবির্ভূত হলেও সন্তু লারমার মতো কেউ এত ধূর্ততার সাথে আঁতাত করে শাসকগোষ্ঠীর নীলনক্সা বাস্তবায়নে পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। কুসুমপ্রিয়প্রদীপ লাল হত্যা (৪ এপ্রিল ১৯৯৮) থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ১১ ডিসেম্বর বিপুললিটনসুনীলরুহিন হত্যায় তার নির্দেশ  যোগসাজশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ যাবকালে সন্তু লারমার মতো কেউ আর পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে এত ক্ষতি করতে পারেনি। তিনি হলেন সাক্ষা মীর জাফর ও বিভীষণ। আন্দোলন গুটিয়ে অলিখিত চুক্তি ও আত্নসমর্পণ করে আঞ্চলিক পরিষদের গদি লাভের বিনিময়ে পাহাড়ের সংগঠন ও আন্দোলন ধ্বংস করেছেন। জনসংহতি সমিতি দুবার (১৯৮২ ও ২০১০) ভেঙেছেন, প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ মোকাবিলা করতে ছাত্রবেশী ধান্দাবাজদের মাস্তানগুণ্ডা (৩০ জুন ১৯৯৭) বানিয়েছেন, পাহাড়ের সুবিধাবাদী দালালদের কুড়িয়ে নিয়েছেন


জাতীয় সংকটময় পরিস্থিতিতে ইউপিডিএফ সময়োচিত ঘোষণা দিতে ও পদক্ষেপ গ্রহণে কখনই দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি এবং সকল ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ইউপিডিএফ অগ্রসর হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং সকল হুমকি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইউপিডিএফএর পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।


নির্বাচন বর্জনের আহ্বান:

পার্টির ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে জনগণের ওপর সর্বত্র  নিপীড়ন ও খবরদারী বিরাজমান, যেখানে ন্যুনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, বরং পোষ্য খুনীদের উপাতে জনজীবন বিপযস্ত এবং যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক কাযক্রম চালাতে দেয়া হচ্ছে না, সেখানে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। গত ১১ ডিসেম্বর পানছড়িতে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী দিয়ে চার ইউপিডিএফ নেতাকে হত্যার মাধ্যমে এই কথার সত্যতা আবার প্রমাণিত হয়েছে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। তাই প্রধান বিরোধী দলসহ গণতন্ত্রমনা সকল দল এই নির্বাচন বর্জন করছে।


এই অবস্থায় যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা হলো জনগণের সাথে নিষ্ঠুর তামাশা ও প্রহসন, নির্বাচনকে চিরতরে নির্বাসন দেয়ার জন্য নির্বাচন। এ নির্বাচন দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। এ পরিস্থিতিতে পার্টি আগামী ৭ জানুয়ারী ২০২৪এর নির্বাচন বর্জন করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।


জনগণের প্রতি পার্টির সুনির্দিষ্ট আহ্বান হলো: ১। আগামী ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচন বর্জন করুন। ২। ভোটদানে বিরত থাকুন, ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। আপনার মূল্যাবান সময় নষ্ট করবেন না। ৩। কোন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন না। ৪। কাউকে ভোট দানে উসাহিত করবেন না। ৫। অন্যকে ভোট দানে বিরত থাকতে নিরুসাহিত করুন। ৬। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করুন। ৭। একজন ভোটার হিসেবে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে আপনার নাগরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। অত্যাচারী সরকার ও দালালদের মুখে চপেটাঘাত করুন।