পাহাড়ে আগাম সবজি চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

প্রকাশঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০৭:২৪:৪৭ | আপডেটঃ ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৪:১৪:১২

সাকিব আলম মামুন, সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকরা কোথাও জমিতে বীজ বপন করছে। আবার কোথাও গাছে আসা সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে আগাম সবজি বিক্রি করে সফলতার মুখ দেখছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন। শীতকালীন সবজির সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা করা গেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন- এমনটাই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮শত হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২শত হেক্টর অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরেও উপজেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮শত হেক্টর জমিতে। পর্যন্ত ৫শত হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে পানি কমার সাথে সাথে বাকি অনাবাদি জমিতেও চাষাবাদ শুরু হবে এবং এবছরও লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাবে। কোনো কোনো এলাকার জমির সবজি বাজারজাতও করা শুরু হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা কাঙ্খিত সাফল্যের মুখ দেখছেন

 

সূত্রমতে, গত বছর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। এসব সবজি বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়েছিল। কারণে চলতি বছর শীত শুরুর অনেক আগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউসহ শীতকালীন সবজি চাষ চাষ হয়েছে। কৃষকরা কোথাও জমিতে সবজির চারা রোপন করছেন। কোথাও নতুন গাছে আসা সবজির পরিচর্যা করছেন। উপজেলার গ্রাম জুড়ে শুধু সবজির আবাদ চোখে পড়ে। ক্ষেত-খামারে সবজি পরিচর্যায় ভিষণ ব্যস্ত কৃষকরা

 

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত বিঘা জমি জুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। অধিকাংশ এলাকায় বাড়ির আঙিনায়ও সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মূলা, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটল, শিম, মিষ্টি-কুমড়া, চাল-কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, গাঁজর, লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাকসহ শীতের নানা রকমের শাক-সবজি। অন্যান্য বছরের তুলনায় বাজারে এবার সবজির দাম বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। শীতকালীন সবজি বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পভিত্তিকও চাষ হচ্ছে

 

কৃষক আমজাদ আলী, আমান উল্লাহ, সাদেক মিয়া, ফজল বেপারী সহ অনেকেই জানায়, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে থাকেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন

 

উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া এলাকার কৃষক কামাল হোসেন জানান, সবজি চাষের ফলে তাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। তারা এখন স্বাবলম্বী। এখন তাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাট-বাজারে যেতে হয় না। সবজি ক্ষেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। দামও ভালো পাওয়া যায়। ইউনিয়নের প্রায় সব ধরণের শাক-সবজি চাষ হয়। এখানকার শাক-সবজিগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। শাক-সবজিগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাইকাররা সরবরাহ করেন

 

একই এলাকার কৃষক সাদ্দাম হোসেন জানান, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে চারার সেবায় ত্রুটি করা যায় না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় দিনই সবজি বিক্রি করা যায়। তাছাড়া চলতি মৌসুমে বাজারে সবজির দামও অনেক ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষকেই তারা লাভজনক মনে করছেন

 

উপজেলার ভাসান্যাদম গ্রামের কৃষক নয়ন তারা জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করেছেন। ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করছেন। দাম ভালো পেলে ৬০-৭০ হাজার টাকা ঘরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন তিনি সবজি ক্ষেতে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত। প্রতি বছর নিয়মিত আবাদের মাধ্যমে সবজি বিক্রি করে তার সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি আরও সহযোগিতা করে তাহলে আগামি বছর আরও এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ বাড়িয়ে দিবেন

 

বগাচতর ইউনিয়নের গাউসপুর-রাঙ্গীপাড়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রওশন জাহান বিপাশা জানান, শীতকালীন আগাম সবজির দাম বাজারে সব সময় বাজারে ভালো পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের আগাম শাক-সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। শীতকালীন আগাম সবজিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। তারা মাঠে থেকে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দেন

 

লংগদু উপজেলার উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শাক-সবজির আবাদ বাড়ানোর লক্ষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উপজেলায় এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ চাষীদের সব ধরণের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, শীতকালীন সবজি চাষে নিয়মিত কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে- প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক, ক্ষেতে বেড়া দেওয়ার জন্য নেট সবজি ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্যজারদেওয়া হচ্ছে। এছাড়াপারিবারিক পুষ্টি বাগানপ্রকল্পের আওতায় বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে