দিদারুল আলম রাফি, তৈছামা ঝর্না থেকে ফিরে। দিনটি বৃহস্পতিবার। সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা। আগেরদিন ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের গন্তব্যের স্থান তৈছামা ঝর্ণা। সকাল দশটার কিছু আগে রওনা হলাম কলেজ মোড় থেকে। বাইক আর চাঁদের গাড়িতে আমাদের ১৯ জনের যাত্রা শুরু হলো। দীঘিনালা থানা বাজার থেকে পশ্চিমে শিবমন্দির হয়ে আমরা এগুতে থাকলাম আবহাওয়া অফিসের পাশ ঘেষা রাস্তা দিয়ে। কিছুদূর যাওয়ার পর জানতে পারলাম এই রাস্তাটি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়ার সাথে যুক্ত হয়েছে যার দুরুত্ব দীঘিনালা হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
রাবারবাগান পাড় হয়ে আমরা যখন পিচঢালা পথের শেষ প্রান্তে পৌঁছালাম ঠিক তখন সামনের ইট সলিং উঁচু পাহাড়ি রাস্তা দেখে খানিক ভয় পেলাম। সাহস করে বাইকের গতি বাড়য়ে পাহাড় চূড়ায় উঠতেই পেছনের সবুজ পাহাড়ে চোখ আটকে গেলো। কিছুতেই যেনো চোখ সড়াতে পারছিলামনা। দৃষ্টিনন্দন দূরের পাহাড়গুলো মনে হলো সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে যন্ত করে বানিয়েছেন।
খুব চ্যালেঞ্জিং কয়েকটি পাহাড় উঠানামা করে আমরা পৌঁছালাম বিষ্ণু কার্বারী পাড়ায়। যেখানে আমাদের গাড়ি রেখে হাঁটতে হবে আরও প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। গাড়ি থেকে নেমেই পুরো টীমের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করলাম।
জুম পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে খানিক হেঁটেই পেয়ে গেলাম ছড়ার পথ। এই পথ ধরে হাঁটলে পৌঁছে যাবো কাঙ্ক্ষিত তৈছামা ঝর্নায়। প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটতেই দূর থেকে শুনলাম পাহাড় থেকে বেঁয়ে পড়া ছমছম পানির শব্দ। বুঝতে বাকি রইলোনা আমরা ঝর্নার খুব কাছেই। এর ঠিক ৫ মিনিট হেঁটেই দেখা মিললো সেই ঝর্নার। যেটিকে দেখার জন্য আমাদের সবার চোখজোড়া প্রায় ছলছল করছিলো। কি সুন্দর সেই দৃশ্য ভাষায় কিংবা লিখে প্রকাশ করা যাবেনা।
ঝর্নাটির উচ্চতা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ফুট। পাথুরে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্নার পানি পড়ছে ঠিক নিচে। মূল ঝর্নার পাশে আরও একটি ছোট ঝর্না রয়েছে। সেটিও দেখার মতো।
তৈছামা ঝর্না খাগড়াছড়ি জেলাধীন দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণু কার্বারী পাড়ায় অবস্থিত। এটিকে অনেকে তৈচাকমা নামেও চিনে থাকে। যার সহজ যোগাযোগ দীঘিনালা থানা বাজার হয়ে ঠিক পশ্চিমে। দূরুত্ব ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার। এই ঝর্নাটি হতে পারে পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি দর্শনীয় স্থান। শুধু ঝর্না নয়, এখানে যাওয়ার চ্যালেঞ্জিং রাস্তা ও পাহাড়ি মনোরম দৃশ্যগুলো আপনাকে বাড়তি আনন্দ দিবে।