প্রকাশঃ ২১ মে, ২০২৩ ০৫:০৩:৪৬
| আপডেটঃ ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:১৩:৩৮
ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। আজ শনিবার সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে এক ছাত্র-জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ছাত্র ও জনসমাবেশের শুরুতে গিরীসুর শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপরই বেলুন উড়িয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সমাবেশের উদ্বোধক ঊষাতন তালুকদার।
এরপরে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে ছাত্র-যুব সমাজ অধিকতর সামিল হউন” স্লোগানকে সামনে রেখে ছাত্র-জনসমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরার সঞ্চালনায় উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। এছাড়াও সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাশ আলো ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানুচিং মারমা।
উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার বলেন, “স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়ে পাহাড়ের মানুষের পক্ষে সন্তু লারমা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। আমরা আজ অবধি সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বিশ্বাস-আস্থা রাখি। সরকারের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে আমরাও বাংলাদেশের নাগরিক। কিন্তু সরকার কর্তৃক বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে নানা প্রকারের মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সরকার বলছেন, পাহাড়ের মানুষ আজ শান্তিতে আছে এবং চুক্তির ৬৫টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী পক্ষ জনসংহতি সমিতি এখনো জানেই না সরকার কবে এই ৬৫টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। এই সরকারের বিরুদ্ধে নয় বলে পার্বত্য চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে দমনের জন্য শাসকগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ মদদে নানা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর উত্থান হচ্ছে। মনে রাখতে হবে এই গোষ্ঠীকে যারা সৃষ্টি করছে দিনশেষে তাদেরই ক্ষতি হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। তাই সরকারকে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এখানে সামরিক হস্তক্ষেপ সমস্যাকে আরও জটিলতর করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ প্রতিনিয়ত জীবনের নিরাপত্তার ভয়ভীত হয়ে দিন পার করছে। আজকের সমাবেশেও অনেকে উপস্থিত থাকতে পারেননি এই ভেবে যে, বিকালে বাড়ি ফিরে গেলে তারা হয়তো নিরাপদে থাকবেন না।”
তিনি আরো বলেন, “যে যে অবস্থানে থাকুক না কেন জুম্ম জনগণকে নিজের শিকড় ভুলে গেলে চলবে না। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হতে হবে। দেশের সকল প্রান্তের মানুষকে এই পার্বত্য চুক্তির তাৎপর্য সম্পর্কেবুঝাতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে পাহাড়ের মানুষ তাদের ভূমি হারাচ্ছে, অস্তিত্ব বিলীন হচ্ছে। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ছাত্র-জনসমাবেশ থেকে পিসিপি ৪ দফা দাবি উত্থাপন করে:
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা কর।
২। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমূহের স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত কর।
৩। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকুরিতে ৫% আদিবাসী কোটা চালু কর।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।