সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় রাকিব হোসেন নামে এক ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন শ্রী মতি রঞ্জন ত্রিপুরা নামে এক ব্যক্তি।
মতি রঞ্জন ত্রিপুরা মেসার্স
সেলিম এন্ড ব্রাদার্স রাবার
প্লান্ট’র ব্যবস্থাপক।
অভিযোগপত্রের আবেদনটি চলতি মাসের ৩
মে গৃহীত হয়।
চিঠি গ্রহণের ১৫ দিন পার
হলেও কোন ধরণের তদন্ত
বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি
রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে। এ
নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অভিযোগকারীসহ
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,
অভিযুক্ত রাকিব হোসেন দীঘিনালার
গুলছড়ি ও জামতলি এলাকায়
নিজস্ব মালিকানা হিসেবে দুইটি ইট
ভাটা পরিচালনা করেন। ভাটা
২ টিতে মাটির যোগান
দিতে সেলিম এন্ড ব্রাদার্স’র নিজস্ব মালিকানাধীন
পাহাড় এবং আশপাশের সরকারি
পাহাড় কোন ধরণের অনুমতি
ছাড়াই কেটে ফেলেছে এবং
পরিবেশের ক্ষতি করছে।
অভিযোগকারী ও স্থানীয় জনগণ
একাধিকবার বাঁধা দিলেও জোর
পূর্বক পাহাড় কাটা চালিয়ে
যায় রাবিক হোসেন।
তাকে কোন অবস্থাতেই পাহাড়
কাটা থেকে বিরত রাখা
যাচ্ছেনা।
সবশেষ গেলো ঈদুর ফিতরের
বন্ধের সময় দিনে-রাতে
পাহাড় কাটার সময় অভিযোগকারী
মতি রঞ্জন ত্রিপুরা ও
স্থানীয় লোকজনসহ বাঁধা দিতে গেলে
রাকিব হোসেনের পালিত সন্ত্রাসীরা তাদের
ধাওয়া করে।
অভিযোগপত্রে আরোও বলা হয়,
স্থানীয় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে পাহাড়
কাটা চালিয়ে যাচ্ছে রাকিব। এইভাবে
পাহাড় কাটা চলতে থাকলে
চলমান বর্ষায় বড় ধরণের
পাহাড় ধসে জনজীবন বিপর্যয়
ও প্রাকৃতিকক পরিবেশ বিশাল আকারে
ক্ষতি হয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ
সৃষ্টি হবে এমনটা শঙ্কার
কথা তুলে ধরা হয়েছে
আবেদনে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাকিব
হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের
চেষ্টা করা হলেও কোন
ধরণের সাড়া দেননি।
তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বেশ
কয়েকবার সংযোগের চেষ্টা করেও কোন
সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
মোবাইল ফোনে পরিবেশ অধিদপ্তরে
লিখিত অভিযোগ পত্রের বিষয়ে
জানতে চাইলে তিনি তা
জানেন না এবং অভিযোগ
অস্বীকার করে বিভিন্নপন্থায় এ
প্রতিবেদককে সমন্বয় করার তদবির
চালাতে থাকেন অভিযুক্ত রাকিব
হোসেন।
এ ব্যাপারে সেলিম এন্ড ব্রাদার্সের
মালিক মো. সেলিম-এর
সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি
বলেন, ইট ভাটা মালিক
রাকিব সাহেবকে বিভিন্নভাবে নিজস্ব মালিকানাধীন পাহাড়টি
না কাটতে অনুরোধ করা
হলেও তিনি তা শুনেননি। পাহাড়টির
দু’পাশের মাটি এমনভাবে
কাটা হয়েছে এতে পাহাড়টি
যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ
হয়ে ওঠেছে। এর
জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণও দাবি
করেন মো. সেলিম।
যদিও মো. সেলিম নিজেও
ইটভাটার মালিক।
এদিকে, রাকিব হোসেনের বিরুদ্ধে ইট ভাটা পরিচালনায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। পাহাড় কেটে মাটি ছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে তার ইট ভাটায় ব্যবহারে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়ভাবে। দীঘিনালা ইট ভাটা ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণসহ অপর ভাটা মালিকদের জিম্মি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও পরিবেশ দূষণ ও আইন অমান্যের দায়ে বিভিন্ন সময় লাখ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে রাকিব হোসেনকে। জনশ্রুতি রয়েছে, দীঘিনালায় চারটি ইট ভাটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরিমানা গুনতে হয়েছে তাকে।
ইটভাটা মালিক রাকিব হোসেনের
ভয়ে অনেকেই মুখ খুলে
অভিযোগ করতে চাননা।
বিশেষকরে ভাটা মালিকদের পাশাপাশি
ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনও প্রকাশ্যে মুখ
খুলতে শঙ্কাবোধ করেন।
পাহাড় কাটা অভিযোগ নিয়ে
দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) আরাফাতুল
আলম বলেন, যোগদানের পর
থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পাহাড় কাটার কোন
অভিযোগ তিনি পাননি।
কোনধরণের অভিযোগ পেলে তা
নোট নিয়ে রাখবেন।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে
তা এড়িয়ে যান ইউএনও। তবে
পাহাড় কাটা দন্ডনীয় অপরাধ
বলছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি বন বিভাগের উপ-বন সংরক্ষক হুমায়ুন
কবীর জানান, যত্রতত্র পাহাড়
কাটা ও বন উজাড়ের
ফলে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ছে। হারিয়ে
যাচ্ছে পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্য।
নিচে নেমে যাচ্ছে পানির
স্তর। এছাড়াও
ঝুঁকিও বাড়ছে। পাহাড়
ও পাহাড়ের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মলিতভাবে উদ্যোগ
গ্রহণ করার কথা বলছেন
তিনি। একইসাথে
সামাজিক বনায়ন সৃষ্টির প্রতি
নজর দেয়ার জন্য আহবান
জানিয়েছেন।