অঙ্কন চাকমা সভাপতি ও অমল ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত

প্রকাশঃ ২৭ মার্চ, ২০২৩ ০২:৩৩:১৪ | আপডেটঃ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৩০:৩৫
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। গত ২৪-২৫ মার্চ ২০২৩ খাগড়াছড়িতে দুই দিনব্যাপী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৬তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ, ডিওয়াইএফ, শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতৃবৃন্দ। কাউন্সিল উপলক্ষে পিসিপি’র একটি অগ্রবর্তী টিম সপ্তাহখানেক পূর্বে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেয় এবং মঞ্চ, হলরুম, খাদ্য-আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করে।

কাউন্সিল উপলক্ষে স্থাপিত ব্যানারের ক্যাপশনে ছিল তিনটি প্রধান শ্লোগান “পার্বত্য চট্টগ্রামে বন পরিবেশ ধ্বংস, খনিজ সম্পদ লুন্ঠনের পায়ঁতারা ও ইসলামিকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোল! শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নৈরাজ্য-গোয়েন্দা নজরদারি-সেনা খবরদারি চলবে না! নির্বিচারে ধরপাকড়, নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, খুন-গুম ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা-হুলিয়া অব্যাহত ভূমি বেদখল ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ এক হও, রুখে দাঁড়াও”।

পিসিপি’র আপোষহীন সংগ্রামকে বিকশিত ও গতিশীল করতে হলে নতুন নেতৃত্বকেও গতিশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করে অংগ্য মারমা বলেন, বিগত সময়ে পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত আপোষহীন সংগ্রামের কারণে সরকার ২০১৭ সালে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে বাধ্য হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ছাত্র যুবসমাজকে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা এবং উত্থান সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠী ও জাতির দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার নীতি আদর্শ সমুন্নত রেখেছে। ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য চুক্তির’ সন্নিকটে পিসিপি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিপরীতে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুবিধাবাদী ও আপোষকামী অংশটি স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করে আপোষ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নেয় এবং পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত, দ্বিধা-বিভক্ত করা হয়েছিল। ফলে ছাত্র সমাজ নানা বিভ্রান্তিতে পড়ে। কিন্তু পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পিসিপি আবার সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ় করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজকে আরো নতুন দিশা দিতে সক্ষম হয়।

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বর্তমান নেতৃত্বে নানা দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে সে সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে তুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে ।


কাউন্সিল অধিবেশনে দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে কমিটির সকল সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিনিধিদের মাঝে ব্যাখা প্রদান এবং নতুন কমিটি প্রস্তবনা তুলে ধরেন পিসিপি সভাপতি সুনয়ন চাকমা। নতুন প্রস্তাবিত কমিটির ওপরে প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা পর্যালোচনা শেষে তুমুল করতালির মাধ্যমে কমিটি অনুমোদন করেন। এতে সর্বসম্মতিক্রমে অঙ্কন চাকমা সভাপতি, অমল ত্রিপুরা সাধারণ সম্পাদক ও শুভাশীষ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়।

কাউন্সিল দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে পিসিপি নব গঠিত সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বিদায়ী কমিটির সভাপতি সুনয়ন চাকমা, নিউটন চাকমা, নীতি চাকমা, রিতা চাকমা ও এন্টি চাকমা নতুন কমিটি ও পিসিপি’র  নেতা-কর্মীদের ওপর প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, পরামর্শ প্রদান করেন।