সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ তোফাজ্জল হোসেন এর বিরুদ্ধে বীরেন্দ্র কিশোর (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও চেয়ারম্যান প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে, শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন। ঘটনাটি গত ১৩ মার্চ ঘটলেও পরে জানাজানি হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী বলেছেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সপ্তম শ্রেণির প্রথম ঘন্টার ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাম্মৎ শারমিন আক্তার। তখন হটাৎ পেছনের দরজা দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন গুমতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো: তোফাজ্জল হোসেন। ক্লাশে ঢুকা মাত্র তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ভয়ে চুপ থেকে কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলে ক্ষেপে উঠেন চেয়ারম্যান। তিনি শিক্ষিকাকে বেত নিয়ে আসতে বলেন। পরে বাইরে থেকে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে এলে সেই কঞ্চি দিয়ে গণহারে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বহু শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাম্মৎ শারমিন আক্তার অভিযোগ করে বলেন, অন্তত ১৬জন ছাত্রী ও ৪জন ছাত্রকে পিটিয়েছেন চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তার মুন্নি বলেছে, ‘চেয়ারম্যান স্যার পেছন দিয়ে হটাৎ এসেই নানা ধরণের প্রশ্ন করায় আমরা আতংতিক হয়ে পড়ি। সে কারণে আমরা জবাব দিতে পারিনি। তাই তিনি আমাদের পিটিয়েছেন।’ শিক্ষার্থী চনিতা ত্রিপুরাও একই অভিযোগ করে চেয়ারম্যানের বিচার দাবী করেন।
জাহিদা আক্তার জানায়, ‘চেয়ারম্যান স্যার আমাদের শিক্ষিকা শারমিন ম্যাডামকে বেত নিয়ে আসতে বলায় ক্লাসে বেত এলাউ নয় বলে জানালেও চেয়ারম্যান স্যার ক্ষান্ত হননি। উল্টো বেত আনতে বাধ্য করেন এবং সেই বেত দিয়ে আমাদের মেরেছেন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল হুদা জানান, ওইদিন বিকেলে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন এবং পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি অবহিত করেন। এমনটি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো: সামছুল হক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
এসময় তিনি এ প্রতিবেদকে জানান, বিষয়টি ন্যাক্কারজনক। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। এবং আগামীতে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া ক্লাসে কাউকে না ঢুকতে পরামর্শ দেন।
তবে, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। জেলা প্রশাসক স্যারও ঘটনা সম্পর্কে অবগত। যদিও কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি; তবে স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা নেয়া হলে সাংবাদিকদের জানানো হবে। অবশ্য গুমতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘সিম্পল বিষয়টি এতো বড় হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। আমি চিকন কঞ্চি দিয়ে মেরেছি। এজন্য আমি ব্যাথিত এবং ভুলের জন ক্ষমাপ্রার্থী।