সোমবার
(১৩ মার্চ ২০২৩) খাগড়াছড়ি
জেলা শহরে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
(পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা
শাখার ১৯তম কাউন্সিল অধিবেশনের
বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা
বলেন।
এক দিনব্যাপী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১৯তম
কাউন্সিল অধিবেশন শেষে উপস্থিত প্রতিনিধিদের
সর্বসম্মতিক্রমে শান্ত চাকমাকে সভাপতি,
রুপান্ত চাকমা সাধারণ সম্পাদক
ও তৃষ্ণাঙ্কর চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৫ সদস্য
বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
কাউন্সিলের ১ম অধিবেশনের শুরুতে
দলীয় সংগীত “পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল” পরিবেশনের
মধ্যে দিয়ে জাতীয় ও
দলীয় পতাকা উত্তোলন করা
হয়। এরপর
পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য অধিকার
আদায়ের সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন,
পঙ্গুত্ববরণ করেছেন এবং জেলে
অন্তরীণ আছেন তাদের শ্রদ্ধা
ও সম্মান জানিয়ে এক
মিনিট নীরবতা পালন করা
হয়।
“পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের নজরদারী
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও” এই
শ্লোগানে লড়াই সংগ্রামে বিভেদ
সৃষ্টিকারী দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হোন, পার্বত্য চট্টগ্রামে
অব্যাহত দমন-পীড়ন, ভূমি
বেদখল ও নারী নিপীড়নের
বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন এই
আহ্বানে কাউন্সিল অধিবেশনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি
নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক
শান্ত চাকমা সঞ্চালনায় স্বাগত
বক্তব্য রাখেন পিসিপি জেলা
শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন চাকমা।
কাউন্সিলে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন
সাবেক ছাত্রনেতা এবং ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর খাগড়াছড়ি ইউনিটের
অন্যতম সংগঠক বিপুল চাকমা
ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা,
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি
জেলা শাখার সহ-সভাপতি
লিটন চাকমা,হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক
এন্টি চাকমা।
এছাড়া, কাউন্সিলে অধিবেশনের খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলা
শাখা কমিটি থেকে প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন কলেজের
শিক্ষার্থী এবং শুভাকাঙ্ক্ষী-সমর্থক
পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে সাবেক ছাত্র নেতা
বিপুল চাকমা বলেন, ২০১৮
সালে ১৮ আগস্ট মুখোশ
বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে স্বনির্ভর
হত্যাকান্ডে ছাত্রনেতা তপন, এল্টন ও
যুবনেতা পলাশ চাকমাসহ ৬জনকে
হত্যা করা হয় প্রকাশ্যে
দিবালোকে। চুক্তির
আগে জেএসএস পাহাড়ি জনগণের
কাছে আওয়ামী লীগকে প্রমোট
করেছে। তার
মাসুল আজ জাতিগতভাবে সকলকে
দিতে হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনের
আগে সরকারের সঙ্গে জেএসএস এর
চুক্তির বিষয়ে গোপন সমযোতা
হয়। এরপর
জেএসএস নেতাকর্মীরা প্রচার করতে থাকেন
যে পাহাড়ের শান্তির জন্য আওয়ামী লীগ
জনদরদী দল এবং তাদের
নির্বাচনে ভোট দিতে জনগণকে
বাধ্য করা হয়।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের
সকল সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনর উচিত অস্তিত্ব
রক্ষার্থে আন্দোলনে সামিল হওয়া এবং
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে
সকল ছাত্র-ছাত্রী, যুব
সমাজকে সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার আদায়ের জন্য
আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
সুনয়ন চাকমা বলেন, পার্বত্য
চট্টগ্রামে যেকোনো প্রান্তে অন্যায়
নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ছাত্র
সমাজকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নিছক
কোন সংগঠন নয়, শাসকগোষ্ঠীর
নানা ষড়যন্ত্র ও বাধা-বিপত্তি
উপেক্ষা করে লড়াই পরিচালনা
করা যেকোনো গতিশীল সংগঠনের
জন্য গর্বের বিষয়।
নব্বই দশকের পাহাড়ি ছাত্রসমাজের
সেই অগ্রযাত্রা আজও চলমান, তাই
শাসকগোষ্ঠী সবসময় পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদের অগ্রযাত্রায় বিঘ্নিত করতে চেয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায্য অধিকার আদায় না
হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
থেমে থাকবে না বলে
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
লিটন চাকমা বলেন পার্বত্য
চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার আদায়ের
জন্য পাহাড়ের সকল ছাত্র -ছাত্রী,
যুবসমাজ এবং নারী সমাজকে
আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে
পার্বত্য চট্টগ্রামে যুবসমাজ নেশাদ্রব্যে আসক্ত হয়ে আন্দোলনে
প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারছে
না। পাহাড়ের
আন্দোলন স্তিমিত করতে সরকার ও
শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন রকম কূটকৌশল অবলম্বন
করে যাচ্ছে। বিপদগামী
অনেকে তাদের সঙ্গে হাত
মিলিয়ে জুম্ম স্বার্থ বিরোধী
কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের
সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা। তাই
সে সমস্যাকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে
সরকারকে চাপ দিতে হবে।
নারী নেত্রী এন্টি চাকমা
বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
পাশাপাশি নারীদের সচেতন হয়ে সংগ্রামে
ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
শাসকগোষ্ঠী নানা কলাকৌশলের মাধ্যমে
পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় জনগণকে নির্যাতন চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয়
মদদে ভূমি বেদখল ও
নারী নিপীড়নের ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত
হচ্ছে । বর্তমানে
আমাদের পাহাড়ি নারীরা কোথাও
নিরাপদ নয়। আমাদের
সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে
অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম
করে যেতে হবে এবং
নারী সমাজকে সামনের কাতারে
এসে ভূমিকা পালন করতে
হবে।
সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা বলেন,
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সকল
ধরণের বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা
করে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমানে
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেনা -গোয়েন্দা নজরদারী
ভেস্তে দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ
পুনরুদ্ধার করতে হবে।
কাউন্সিলের ২য় অধিবেশনে পুরনো
কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করে নতুন
প্রস্তাবিত কমিটিকে সবার সম্মতিক্রমে করতালির
মাধ্যমে পাশ করা হয়। এতে
শান্ত চাকমাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক রুপান্ত
চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক
হিসেবে তৃষ্ণাঙ্কর চাকমাকে নির্বাচিত করে ১৫ সদস্য
বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা
করা হয়।
পরে নতুন কমিটিকে শপথ
বাক্য পাঠ করান পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুনয়ন
চাকমা।