সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আর দীঘিনালা উপজেলার মাঝামাঝি এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি। প্রান্তিক এই জনপদের মানুষদের জীবিকার অবলম্বন হয় জুমচাষ নয় দিনমজুরী অথবা বনের উপকরণ সংগ্রহ করে যেটুকু বিক্রি করা যায়। এই এলাকার মূল সড়ক ধরে প্রতিদিন কতো জনপ্রতিনিধি-সরকারি কর্মকর্তা আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু হতদরিদ্র এসব মানুষের দু:খ-দুর্দশার কথা কখনো মন দিয়ে শোনার কারো সময় হয় না। আর তাই পাড়ার ওপর দিয়ে কয়েক দশক আগে বিদ্যুতের লাইন গেলেও একটি পরিবারও পায়নি সংযোগ। পানির কষ্টে জীবন যেনো এক অসহনীয় দুর্ভোগ আক্রান্ত। কাছাকাছি বিদ্যালয়ের অভাবে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে শিশুরা। বাল্য বিয়ের ঘানি টানতে টানতে পুরো এলাকার মানুষগুলোর চেহারা যেনো জীর্ণকায়।
এমন গ্রামে স্বয়ং জেলা
প্রশাসক যাবেন এবং মন
খুলে সুখ-দু:খের
কথা ভাভাগি করবেন; তা
গ্রামবাসীর কল্পনারও অতীত ছিলো।
সত্যি সত্যিই খাগড়াছড়ির জেলা
প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান যখন
অফিস শেষে পড়ন্ত বিকেলে
আট মাইল মন্দির এলাকায়
শীতের কম্বল নিয়ে উপস্থিত
হন, তখন গ্রামের সববয়সী
নারী-পুরুষরা তাঁকে মনের উষ্ণতা
দিয়ে স্বাগত জানান।
জেলা প্রশাসক নিজের বক্তব্য দেয়ার
আগে উপস্থিত তৃণমূলের বাসিন্দাদের বক্তব্য শুনে দারুণ সমব্যাথী
হয়ে উঠেন। তিনি
আট মাইল এলাকার প্রধান
সমস্যা পানি সঙ্কট নিরসন,
বিদ্যুৎ সংযোগ ও সোলার
হোম সিস্টেম চালু, সরকারি ঘরের
সুবন্দোবস্ত এবং কর্মক্ষম বেকার
নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার করার ঘোষণা দেন।
একজন জেলা প্রশাসকের মুখ
থেকে এমন প্রত্যয় শুনে
গ্রামের মানুষরা আবেগ আপ্লুত হয়ে
পড়েন। প্রতিটি
মানুষের চোখে-মুখে দীপ্যমান
অভিব্যাক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠে।
শীতের কম্বল দিতে এসে
প্রত্যন্ত এই পাহাড়ি গ্রামের
মানুষের মনে যেনো অমিত
এক আশার আলোয় জ্বালিয়ে
দিলেন। তিনি
গ্রামের মানুষদের যে কোন প্রয়োজনে
তাঁর কার্যালয়ে যাবারও অনুরোধ জানান
গ্রামবাসীদের।
এসময় এলাকার দুই শতাধিক
নারী-পুরুষ তাদের সুখ
দু:খের গল্প শোনান,
জেলা প্রশাসককে। জেলা
প্রশাসক তিনি তড়িৎ গতিতে এলাকায়
বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার আশ্বাস
দেন। এছাড়া
সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা
গ্রহণ করার আশ্বাস প্রদান
করেন।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পড়ন্ত
বিকেলে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের সাত মাইল
ও আট মাইল গ্রামে
শীতবস্ত্র বিতরণ করার সময়
তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান
উন্নয়নে এসব কথা বলেন।
শীতবস্ত্র প্রদানের আগে স্থানীয় মন্দির
প্রাঙ্গণে ‘খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)’-এর সভাপতি প্রদীপ
চৌধুরী’র সঞ্চালনায় এবং
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় স্বাগত
বক্তব্য রাখেন, পেরাছড়া ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত
ছিলেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম, সহকারী কমিশনার
(ভূমি) উম্মে ইমামা বানিন,
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ত্রাণ
কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, খাগড়াছড়ি
সাংবাদিক ইউনিয়ন’র সা.
সম্পাদক সৈকত দেওয়ান, সহ-সভাপতি দুলাল হোসেন
এবং যুগ্ম-সা. সম্পাদক
লিটন ভট্টাচার্য্য রানা ও এশিয়ান
টিভি’র জেলা প্রতিনিধি
বিপ্লব তালুকদার।