প্রকাশঃ ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১১:১৯:৩৩
| আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০৮:২১:৪৯
সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কর্তৃক রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য মেইনথিন প্রমীলার সঞ্চালনায় এবং সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিরি সহ-সভাপতি ও ২৯৯নং পার্বত্য রাঙামাটি জেলার সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ^ব্যিালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান এবং এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিক ও বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় এম এন লারমা শীর্ষক প্রারম্ভিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সতেজ চাকমা এবং এম এন লারমা স্মরণে গান পরিবেশন করেন এএলআরডির জান্নাত-ই ফেরদৌসী।
আলোচনায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল চৌধুরী বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আকাঙ্খাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করেছিলেন । তিনি চেয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে, শাসনতন্ত্রে জুম্ম জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি থাকবে। কিন্তু ১৯৭২ সালের সংবিধান জুম্ম জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিতে পারেনি। যার কারণে তিনি স্বশস্ত্র বাহিনী গঠন করার মধ্যে দিয়ে ইস্পাত কঠিন আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে চেয়েছিলেন।
বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্মবার্ষিকীতে বিন¤্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন একজন অকপট, সরল মানুষ। তিনি চেয়েছিলেন একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। যে রাষ্ট্রে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে দিয়ে দেশে ধনী গরীবের কোন ব্যবধান থাকবেনা। তিনি ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার হারা মানুষের কথার পাশাপাশি তিনি দেশের সমগ্র খেতে খাওয়া, মেহনতি, শ্রমজীবী মানুষের কথা বলে গিয়েছেন।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট শামসুল হুদা বলেন, এম এন লারমা রাজনৈতিক আদর্শে অত্যন্ত সৎ ছিলেন। যার কারণে তিনি তার অঞ্চলের নিপীড়িত মানুষের কথা, দেশের গরীব কৃষকের কথা সংসদে অকপটে বলতে পেরেছিলেন। তিনি আরো বলেন, এম এন লারমার রাজনৈতিক প্রাজ্ঞ, মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি তরুণকে মানবিক রাষ্ট্র গঠনের কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।
কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, এম এন লারমা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের নেতা নয়, তিনি জাতীয় নেতা। তার জীবনাদর্শ, তার চেতনাকে স্মরণ করা সকলের দায়িত্ব। তিনি বলেন, এম এন লারমা একটি মানবিক সমাজ চেয়েছিলেন যে সমাজে মানুষের মাঝে কোন বিভেদ থাকবেনা, বৈষম্য থাকবেনা। প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার স্বকীয় ঐতিহ্য, রীতিনীতি, ধর্ম দ্বিধাহীন ভাবে পালন করতে পারবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বিপ্লবী এম এন লারমার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একাধারে শিক্ষাবিধ, সমাজ সংস্কারক ও রাজনীতিবীদ। শিক্ষকতার পেশা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে তিনি যেমন একদিকে শিক্ষা বিস্তার করার কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন তেমনি সমাজ সংস্কারক হিসেবে ঘূণে ধরা সামন্তীয় সমাজব্যবস্থা, পশ্চাৎপদ সমাজব্যবস্থাকে বদলানোর জন্য নিরলস সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন। তিনি শুধু পাহাড়ের মানুষের কথা বলেননি, তিনি দেশের সমস্থ কৃষক, শ্রমিক, মাঝি-মাল্লার অধিকারের কথাগুলো নির্ভয়ে সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমী। জঙ্গলে অবস্থানকালে তিনি তার সতীর্থদের প্রাকৃতিক জীবজন্তু না মারার জন্য বারণ করতেন।
তিনি আরো বলেন, এম এন লারমার যে চাওয়া সে চাওয়া আজও পূরণ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে এম এন লারমার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের যে চেষ্টা সেটাও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত থাকার ফলে ভেস্তে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আদিবাসীদের দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণের প্রতিনিধিরা ব্যক্তিস্বার্থের চক্রে বন্দী রয়েছেন। যার কারণে এম এন লারমার বলে যাওয়া সেই গরীব, মেহনতী, মাঝি-মাল্লারা এখনো অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এম এন লারমা বলতেন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে গর্বের সহিত বেঁচে থাকতে হবে। উচ্চমার্গীয় চিন্তা আর সাধারণ জীবনযাপন ছিল তার জীবনাদর্শ বলেও ঊষাতন তালুকদার উল্লেখ করেন।