প্রকাশঃ ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১১:১৫:২৪
| আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৪:২৭:৫৮
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা । পাহাড়ের কোলে শ্বাশত সুন্দরের মাঝে জন্ম নেওয়া এক দ্রোহী নামের মূর্তমান প্রতীক এই ক্ষণজন্মা । তারঁ জন্ম ১৯৩৯ সালের আজকের এই দিনে (১৫ সেপ্টেম্বর)। আমি এবং আমার সমসাময়িক প্রজন্মের তরুণদের এম.এন লারমাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এবং হচ্ছে তাঁর জীবনবোধের দাম্বিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের প্রত্যেকটি ঘুমন্ত মানুষের অন্তরে জাগিয়ে দেওয়া জুম্মজাতীয়তাবাদী চেতনায় সাম্যবাদী ও মানবিক আদর্শের সমাজ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে সংগ্রামরত সবুজ পাহাড়কে এবং প্রিয় বাংলাদেশকে।আমরা যারা এম. এন লারমাকে স্বচক্ষ্যে দেখিনি কিন্তু লারমাকে পাঠ করছি পাহাড়ের প্রত্যেকটি ঢালে ঢালে, পরতে পরতে লেগে থাকা তাঁর রক্তবিন্দু দিয়ে লেখা কিতাব- ”পার্বত্য চট্টগ্রাম” থেকে। বিভিন্ন মাধ্যমে লারমাকে পাঠ করে আমরা যারা এসময়ের তরুন হিসাবে দাবী করি এবং লারমা তার জীবনকে উৎসর্গের মধ্য দিয়ে পাহাড় তথা বর্তমান তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যাকে যিনি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন সেইসব সমস্যাগুলোর আবর্তে আমরাই যারা বেশি জর্জরিত রয়েছি এবং আগামীদিনে মোকাবেলা করার জন্য লারমাকে অনুশীলন করছি সেইসব তরুণদের হয়ে আজকের এই দিনে প্রয়াত নেতা এন. এন লারমাকে জানাচ্ছি সশ্রদ্ধ সালাম এবং তাঁর জন্মদিনে আজকের এই ক্ষণে জানাচ্ছি পাহাড়ের সবুজের ঢালে সেজে থাকা ফুল ”ছদরক” ফুলের শুভেচ্ছা।
তথ্য প্রযুক্তির প্রবল প্রতাপ এবং বিপ্লবের এই যুগে আমাদের মত অধিকাংশ তরুণ যারা বাসার এককোণে বসে কেবলমাত্র একটি ফেসবুক স্টেটাস দিয়ে ফেসবুকীয় বিপ্লবে সমাজকে পাল্টানোর দিবাস্বপ্ন দেখি এবং পাহাড়ী তরুণরা যারা আমাদের জন্মভূমি প্রিয় পাহাড়ের কোলে বহমান ঝরনা ধারায় অবগাহনে বাহারী পোজ দিয়ে সেলফির বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের পাহাড়কে সুইজারল্যান্ড, মোনাকো বলে প্রচার করতে থাকি তাদের কাছে এম. এন লারমার জীবনবোধ হতে পারে এক পরম মহৌষধ এবং অনুকরণীয় আদর্শ । বিভিন্ন পঠন-পাঠনে আমরা জানতে পারি প্রিয় নেতা খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তাঁর জীবনাচরণের মধ্য দিয়ে উচ্চারিত অমোঘ বাণী- ”
Ó Simple living & High thinking” অর্থাৎ উচ্চমার্গীয় চিন্তা এবং সাদামাটা জীবনযাপন- এই হোক আমাদের মত প্রজন্মের তরুণদের কাছে অনুকরণীয় আদর্শ।
প্রয়াত নেতা কুচক্রীদের দ্বারা শহীদ হওয়ার পর আমরা জানতে পারি তাঁর সহযোদ্ধারা তার ব্যবহার্য কেবল কয়েকটি জিনিসই পেয়েছিলেন। তার মধ্যে ছিল প্রয়াত নেতার ব্যবহৃত দুটি কাপড়, একটি গিলাপ কাপড় যা দিয়ে তিনি বালিশ বানাতেন, একটি পেন্ট,একটা শার্ট, পড়নে এক জোড়া মোজা, বহু পুরনো এক জোড়া জুতা, বহু পুরনো একটি গেঞ্জি, একটি লুঙ্গি এবং একটি দেশীয় ঝোলা।
তবে তাঁর কাছে ছিল অনেকগুলো বই,কিছু ঔষুধ, একটি ডাইরী , ছোট ফোটো এ্যালবাম ও কয়েকটা কাঠপেন্সিল।(স¥ারক গ্রন্থ- মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা-জীবন ও সংগ্রাম বইটির পৃষ্ঠা নং-৯০)।
কাজেই আমরা বলতে পারি প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সেই যাযাবর,অনিশ্চিত,গেরিলা জীবন যাপনের মধ্যেও জ্ঞানের প্রতি তাঁর অপরীসিম প্রেম এবং ভালোবাসা থাকার দরুন তিনি অনেকগুলো বই তাঁর সংগ্রহে রাখতেন এবং অধ্যয়ন করতেন।
বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সে অভিযাত্রার প্রথমার্ধেই মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার যে গণতান্ত্রিক,অসাম্প্রদায়িক,ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্যবাদী আদর্শের মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়েছিল সেই শুরুতেই শিশু বাংলাদেশ যখন ভুল নিশানায় হাঁটতে শুরু করে লারমা তখন পথ বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তার প্রজ্ঞা ও ভাবনা দিয়ে।কিন্তু তৎকালীন আইন প্রণেতারা তাদের জাতিগত ঔদ্ধত্বে জাত্যভিমানী চিন্তার খোলসে খামসে ধরে পুরো মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নকে আর তখন থেকেই শুরু হয় দেশে মূল ভাষাভাষী বাঙালী জনগোষ্ঠী ছাড়াও বাংলাদেশের ভূখন্ডে বসবাসকারী ভিন্ন ভাষাভাষী ও ভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক আদিবাসী জাতিসমূহের স্বাধীন বাংলাদেশের ভূখন্ডে রাষ্ট্র কর্তৃক নিগৃহীত,নিপীড়িত,নির্যাতিত ও ক্রমশ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার করুণ ইতিহাস।
তাইতো আজকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও পাহাড়ের সুন্দর সবুজ এখনো পাহাড়ীর রাঙা রক্তে ক্রমশ ¯œাত এবং পাহাড়ের পরতে পরতে লাশ পড়ে থাকে যেন এটাই এখন পাহাড়ের রং।আর পাহাড়ের জীবনের দাম এখন নিতান্ত সস্তা এবং সুলভ। খুব সহজেই এবং চাইলেই নিভিয়ে ফেলা যাই পাহাড়ের ঢালে ঢালে যাপিত জীবনের সহজ-সরল প্রদীপগুলো। আর ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা, হয়রানি,অপহরণ, মিথ্যা মামলা,উচ্ছেদ,দেশান্তরীকরণ চলছে সমান তালে, সমান কদমে।আর এদিকে পুরো বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালেও তেমন কোনো আশার আলো দেখতে পাওয়া যাই না।উন্নয়নের বাহারী সাজে সজ্জিত দেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও তরুণ ছাত্র-যুবাদের কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে সেই স্লোগান-
”রাস্তা সাময়িক বন্ধ,রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে।”
মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা তার মেধা,প্রজ্ঞা,দেশপ্রেম,বিচক্ষণতা ও নির্ভীকতার সহিত ১৯৭২ সালে (২৫ অক্টোবর) গণপরিষদ বিতর্কের সময় যে অমোঘ সত্যগুলো উপস্থপন করেছিলেন সেগুলোর মাধ্যমে যদি বাংলাদেশের সংবিধানকে সাজানো হত,কার্যকর করা হত তাহলে আজকে হয়ত বাংলাদেশের তরুণরা রাস্তায় নেমে মন্ত্রী,এমপিদের শিক্ষা দিয়ে এভাবে রাষ্ট্র মেরামতের কথা বলতেন না ।
১৯৭২ সালের ২৫ শে অক্টোবরের গণপরিষদ বিতর্কে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা গণপরিষদে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, সেখানে লারমাকে কখনো স্পিকার আবার কখনোবা অন্য কোনো বাঙালী সাংসদ তাঁর বক্তব্যের মাঝখানে ছয় ছয় বার বাঁধা প্রদান করেছেন।এমনিতেই নির্দলীয় সাংসদ,গণপরিষদে সংখ্যা লঘিষ্ঠের লঘিষ্ঠ একজন হয়ে পাহাড়ের নিপীড়িত মানুষ তথা সমগ্র বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের কথা তিনি যেভাবে অকপটে তুলে ধরেছিলেন তা আজকের তরুন প্রজন্মের কাছে এই বারতা দেয় যে,”যত বাঁধাই আসবে আসুক লারমারা সেখানে নিজেদের জীবনের কথা বলে যাবে অবিরত।”
তিনি সেদিন বলেছিলেন,
”(আমাদের সংবিধানে) একদিকে হিংসাদ্বেষ-বিহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে,আর অন্যদিকে উৎপাদন-ব্যবস্থাসমূহের মালিকানা,রাষ্ট্রীয় মালিকানা,সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ করে শোষনের পথ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন একটা ক্ষমতা দেখতে পাচ্ছি,যে ক্ষমতা বলে সরকার এক লোককে এক পয়সার অধিকারী হতে দেবেন আর অন্য একটা লোকের জন্য এক কোটি মালিকানার অধিকার রেখে দেবেন।”
লারমার সেই ১৯৭২ সালে বলে যাওয়া কথার বাস্তবসম্মত সূত্র পেতে পারি আমরা যারা কিছুদিন আগের সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়েছি।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমরা জেনেছি যে,
WEALTH-X নামের নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা বিগত ছয় বছরের (২০১২-১০১৭) গবেষণার আলোকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮তাদের যে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সেখানে দেখানো হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে শতকরা ১৭.৩ হারে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে এবং তা সারাবিশ্বে শীর্ষ।
কিন্তু এই ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুশি হওয়ার কিছু নেই।
কেননা বঙ্কিম বাবু আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে গেছেন -”ধনীর ধনবৃদ্ধি মানে সমাজের ধনবৃদ্ধি নয়”। কারণ, এই সমাজের যেসব সম্পত্তি রয়েছে সেইসব সম্পত্তিসকল কতক লোকের হাতে কুক্ষিগত হয়ে তারা ধনী সেজে থাকে তার বিপরীতে রাস্তায় ভিক্ষুক, বস্তির বাসিন্দা থেকে শুরু করে সমাজের গরীর মানুষ আরো গরীব হয়ে যাচ্ছে আর সেই সংখ্যাটা বেড়ে গিয়ে আরো প্রান্তিক থেকে প্রান্তিক হচ্ছে। যে কথা অনেক আগেই সহজ সরলভাবে বলে গিয়েছিলেন প্রয়াত নেতা লারমা।আর এই সমাজকে যারাই বেশি ধারণ করেন তাঁরা হলেন কৃষক,শ্রমিক,কুলি,কামার, কুমোর, মাঝি,মাল্লা,তাতি যারা এখনো ঘামের বিনিময়ে নিজেদের অন্নসংস্থান করছেন, কতিপয় ধনীরা নয়।
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা সংসদে তাদের অধিকারের কথা বলে গিয়েছিলেন অকপটে,সাবলীলভাবে এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়নের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন দেশের সংবিধানে।কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে নিপীড়িত মানুষ সে নিশ্চয়তা এখনো পায়নি আর আদিবাসী মানুষ পায়নি তাদের পরিচয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি।
আমরা জানি, লারমা ছিলেন নিজ আদর্শে অবিচল। যার জন্য তিনি ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিচারে জাত্যভিমানকে বিজয়ী করার জন্য লারমার ন্যায্য দাবীকে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর বাঙালী জাতীয়তাবাদ এবং পরিচয়কে যখন আনুষ্ঠানিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখন তার প্রতিবাদে তিনি গণপরিষদ থেকে ওয়াক-আউট করেন।তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আদিবাসীরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের নিজেদের স্বকীয় পরিচয় এবং জাতীয়তার প্রশ্নে অবিচল এবং দাম্বিক।মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা বাঙালী পরিচয়কে প্রত্যাখ্যান করে কেবল সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করেননি । গণতান্ত্রিক,সরল-সাবলীল ভাষার আবেদন যখন রাষ্ট্র শুনেনি এবং রাষ্ট্র যখন তার কন্ঠকে রোধ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল তখন লারমা সবুজ পাহাড়ে সরব হয়েছিলেন বারুদের গন্ধ নিয়ে এবং গেরিলার পদধ্বনি দিয়ে। তাই মাদলের গানে এখনো আমরা লারমাকে খুঁজে পাই-
”শোষিত মানুষের বেরিকেড করেছিলে মুক্তির লাল পতাকা হাতে নিয়ে,
বিপ্লবী সাম্য বুনে দিয়েছিলে জুম ক্ষেতে গেরিলা পদধ্বনি দিয়ে।”
ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে একটু পেছনে গেলেই দেখা যাই, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাধঁ প্রকল্পের অথৈ জলে পাহাড়ী মানুষেরগেরস্ত,ঘরবাড়ী,সংসারের সমগ্রতা যখন হারিয়ে যাই যাই অবস্থা তখন পাহাড়ের সামন্তীয় মেরুদন্ডহীন নেতৃত্বের ”সহমত-বাদের” বিরুদ্ধে লারমার দ্রোহ নিয়ে একাই দাড়িঁয়ে পড়ার যে দাম্বিকতা তা আজ ইতিহাসে স্মরণীয় এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় বলে মনে করি।
ভোগবাদী,লালসাময় এক জীবনের হাতছানিকে তুচ্ছ করে জুম্ম জনগণের হাজার বছরের লাঞ্চনা আর বঞ্চনার জীবনকে বদলিয়ে দেবার জন্য মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা”শিক্ষা গ্রহন কর, গ্রামে ফিরে চল” স্লোগান তুলে যে ত্যাগময় জীবনকে বরণ করে নিয়েছিলেন তা হয়ত পুঁজিবাদী আর সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো খুব ভালোভাবে নেননি। ঘুনেধরা সামন্তীয় জুম্ম সমাজকে বদলিয়ে ”গ্রাম পঞ্চায়েতী” ব্যবস্থায় প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে সাম্যবাদী আদর্শের মানবিক সমাজ গঠনের প্রগতিশীল চিন্তাধারকে বিকাশের লক্ষ্যে তিনি যখন অসীম সাহস আর তাঁর হাতে গড়া গেরিলা বাহিনী নিয়ে এগোচ্ছিলেন তখন অশুভ শক্তির দোসর হয়ে চার কুচক্রী লারমাকে আঘাত করে পেছন থেকে।
দ্রুত নিস্পত্তির ধোঁয়া তুলে জুম্ম জনগণের এতদিনের গড়া সংগ্রামকে চোরাবালিতে বিলিয়ে দিতে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে লারমার গড়া সংগঠন জনসংহতি সমিতির মধ্যে ফাটল ধরালে লারমা আলোচনার মাধ্যমে ”ক্ষমা করে ভুলে যাওয়া” নীতি অবলম্বন করে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন তার পরিণামে আমরা পেলাম কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসের ১০ নভেম্বর।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর আটজন সহযোদ্ধাসহ কুচক্রীদের বুলেটের আঘাতে শহীদ হন জুম্ম জনগণের প্রিয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা।
লারমার শারিরীক মৃত্যু হলেও সাচ্চা,ত্যাগী ও বিপ্লবী নেতার জীবনাদর্শ এখনো আমাদের কাছে জীবন্ত এক পাথেয়। প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর কিংবা ১০ নভেম্বর আসলে এখনো পাহাড়ের তারুণ্যের মধ্যে লারমা দ্রোহ ছড়ান এবং দূর থেকে পথ নির্দেশ করেন জুম্ম জনগণ তথা দেশের নিপীড়িত আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে।
তাই লারমা পাহাড়ের তারুণ্যের কাছে মিশে আছে এবং থাকবে বিদ্রোহের গান হয়ে, গলা ছেড়ে প্রতিবাদী জাগরণের গান গাওয়ার সাহস সঞ্চারক হিসাবে এবং নিপীড়িত আদিবাসী তথা মেহনতি মানুষের হাজার বছরের বঞ্চনা ও ক্ষোভের তাড়নায় রাজপথে নামা মিছিলে সামনের সারিতে শরিক হয়ে।
সবশেষে প্রিয় নেতার ব্যবহৃত ডাইরীতে লেখা তাঁর একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই সেটি হল-
’মহান জুম্ম জনগণের আন্দোলন দীর্ঘজীবি হোক, সারা দুনিয়ার নিপীড়িত জনগণ এক হও। জয় আমাদের হবেই- হবে।”
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা লাল সালাম।
লেখক- সতেজ চাকমা
আদিবাসী অধিকার কর্মী
ও শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখাটি লেখকের একান্ত ব্যাক্তিগত